“ন ডরাই সিনেমার শুটিং শুরু হওয়ার কিছুদিন পরেই প্রোডিউসার আর ডিরেক্টর এসে আমাকে বললেন- গানে একটা দৃশ্যে আছে যেখানে দাঁত দিয়ে তোমাকে নারিকেল ছিঁড়তে হবে। প্র্যাকটিস করা শুরু করো এটা, যত কম সময়ে কাজটা করতে পারবে, ততই ভালো।
এর আগে জীবনেও আমি এই কাজ করিনি। দাঁত দিয়ে নারিকেল ছিঁড়তে দেখলাম দেড় থেকে দুই মিনিটের মতো লাগে। আগে কোন অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও যদি এমন সময় লাগে, তাহলে বুঝে গেলাম নিয়মিত প্র্যাকটিস করলে এর চেয়েও কম সময়ে কাজটা করা সম্ভব। আমি ভুল ছিলাম না। এখন আমি ৩৫ সেকেন্ড থেকে ৪০ সেকেন্ডের মাঝে একটা নারিকেল নিজের দাঁত দিয়ে ছিঁড়ে ফেলতে পারি।
প্রায় ছয় মাস নিজের ফ্যামিলি থেকে দূরে ছিলাম এই সিনেমার জন্য। সার্ফিং শেখা, নতুন এক ভাষা শেখা- সব মিলিয়ে অনেক সময়। সার্ফিং করতে গিয়ে বিপদেও পড়েছি অনেক। ট্রেনিং এর সময় মাঝে মাঝে ট্রেনারকে না বলেই চলে যেতাম সমুদ্রে।খুবই বিপদজনক ব্যাপার সেটা! এরপরেও কেন যেতাম? জানিনা আসলে। সমুদ্র একটা অদ্ভুত জিনিস! কীভাবে যেন ডাকতে থাকে। সেই ডাক উপেক্ষা করা অসম্ভব। আপনি সার্ফিং জানেন বা নাইবা জানেন!
২০১৬ সালে আইসক্রিমের পরে আমি কেন আর সিনেমা করলাম না, সেই প্রশ্ন অনেকেরই আছে। সিনেমার অফার যে আসে নি, এমনটা না। কিন্তু এত বছর ধরে মডেলিং করেছি, অনেক মানুষের সাথে মিশেছি, বাইরের অনেক কাজ দেখেছি। নিজের মোটামুটি লেভেলের হলেও একটা রুচি গড়ে উঠেছে। সেই রুচিতে যে সিনেমা ম্যাচ না করবে, সেরকম সিনেমা করব না বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। ন'ডরাই নারীপ্রধান সিনেমা, এখানে আমি কীইবা আর করব- এমন ধারণা আমার মাথায় কখনও আসেনি। কারণ স্ক্রিপ্ট আর আমার চরিত্রটাই এমন, যেখানে নিজের পটেনশিয়ালিটি দেখানোর জায়গা আমার আছে।নিজের পাগলামি দেখানোর জায়গা আছে। আর আছে বলেই আমি এই সিনেমাকে হ্যাঁ বলে দিয়েছি। যেমনটা হ্যাঁ বলেছি পরাণ আর হাওয়া সিনেমাকে।
অনেকেই বলছেন ন'ডরাই সার্ফিং নিয়ে সিনেমা। একটু শুধরে দিয়ে বলতে চাই, ন'ডরাই সার্ফিং নিয়ে সিনেমা না। ন'ডরাই সার্ফিং যারা করে, তাদের ক্রাইসিস নিয়ে সিনেমা। যেখানে সার্ফিং করাই অধিকাংশ মানুষের কাছে কোন "কাজের" কাতারেই পড়ে না, সেখানে আবার একজন নারী সার্ফিং করবে আর সেটা নিয়ে কিছু না কিছু অর্জন করবে- সেটা এই অঞ্চলের অনেক মানুষই বাঁকা চোখে দেখবে আর সেই থেকেই শুরু হয় ক্রাইসিস। সেটা থেকে একজন মানুষ কীভাবে উতরে বের হয়ে আসে, সেটাই আমরা দেখিয়েছি।
শুধু সার্ফিং এর সুন্দর সব দৃশ্য নিয়ে একটি গোটা সিনেমা বানানোর সামর্থ্য আমাদের এখনও হয়নি।সেটা হলিউডের আছে, আমরা হলিউড নই। আমাদেরকে আমাদের গল্প দিয়েই এগোতে হবে, নিজের সেরাটা দিতে হবে নিজেদের গল্পে। সেটাই আমরা চেষ্টা করেছি এই সিনেমাতে।”
-শরিফুল রাজ