শুক্লপক্ষ ওয়েব ফিল্মে রিভিউ ডাউনলোড /Shuklopokkho (2022) Bengali full chorki Web flim Download Review
আলোচনা'র বিষয় : 'শুক্লপক্ষ' । (স্পয়লার সতর্ক)
-
প্রথমেই গল্পের কিছুটা ধারণা দিয়ে শুরু করা যাক । গল্পটি'র মোটিভ সিরিয়াল কিলিং । একটি ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস থেকে একের পর এক মেয়ে নিখোঁজ হয়ে যায় ! কিন্তু কেন ? পুলিশী তদন্ত চলমান থাকা সত্ত্বেও কেন পুলিশ কোনো আলামত খুঁজে বের করতে পারছেনা ? অন্য দিকে এলাকার প্রভাবশালী লোক ইদ্রিস আলী । তার ভাতিজা হুমায়ুন । ব্যায়বহুল গাড়ি নিয়ে ভার্সিটি'র ক্যাম্পাসে ঘোরাঘুরি আর মেয়েদের সঙ্গে মেলামেশা-ই যার কাজ । যাকে কিনা আবার সন্দেহের চোখে দেখে মঞ্জু । লাবনী হোসাইন, যার গানের গলার সুর বেশ মধুর । কিন্তু কে এই মঞ্জু ? এই গল্পে লাবণী'র কি কাজ ? সব মিলিয়ে গল্পটি অতীত এবং বর্তমানকে ঘিরে বলা হয়েছে ।
প্রথমেই কথা বলবো গল্প, সংলাপ, চিত্রনাট্য এবং পরিচালনা'র বিষয়ে :
এই গল্পটি লিখেছেন ভিকি জাহেদ, এবং চিত্রনাট্য লিখেছেন নাজিম-উদ-দৌলা । গল্প ভালো হলেও চিত্রনাট্য ছিল আংশিক দূর্বল । চিত্রনাট্যে ফার্স্ট হাফ খুব একটা ভালো ছিল না বা স্টোরি বিল্ড আপ ও বলা যায় । সেকেন্ড হাফ থেকে গল্পের গতানুগতিক ধারা বজায় রেখে শেষ অবধি নিয়ে গেলেও, সেকেন্ড হাফে গল্পের প্রতিটি চরিত্র একটি চরিত্র ছাড়া অসম্পূর্ণ রেখে দেয়া হয়েছে । হয়তবা পরবর্তী অংশে অসম্পূর্ণ সব চরিত্র পূর্ণ করা হবে ।
এবার আসছি অভিনয় প্রসঙ্গে :
প্রথমেই শরীফ সিরাজ । যার অভিনীত কাজ আমার প্রথম দেখা হয়েছিল ''চরকি" অ্যাপে মুক্তিপ্রাপ্ত 'ইউটিউমার' । জ্যাকসন ভাই চরিত্রে তিনি ছিলেন অনবদ্য, অসাধারণ । তবে, যদি শুক্লপক্ষের পুলিশ পরিদর্শক কামরুল চরিত্রের কথা বলি তাহলে পরিচালক চাইলে আরো রাফ অ্যাক্ট তার ভেতর থেকে বের করে আনতে পারতেন । যদিও যতটুকু পারফর্ম করেছেন অ্যাভরেজ ।
মঞ্জু চরিত্রে খায়রুল বাশার ছিলেন গল্পের চরিত্র অনুসারে ঠিকঠাক ।
সুনেরাহ বিনতে কামাল, তিনি ও তার চরিত্রে ভালো করেছেন । বিশেষ করে শেষ দৃশ্যের অংশটুকুতে দারুন পারফরম্যান্স দিয়েছেন ।
হুমায়ুন চরিত্রে জিয়াউল রোশানের চরিত্রটি ঠিকঠাক বোঝা যায়নি, সেটি রোশান ভাইয়ের দোষ বলছিনা, যারা ইতিমধ্যে দেখেছেন তারা জানেন তার একটি রোগ আছে, যেটি পুরোপুরি ভাবে বিশ্লেষণ করা হয়নি । আগেই আপনাদের বলেছি একটি চরিত্র ছাড়া বাকি সব চরিত্র অসম্পূর্ণ রেখে দেয়া হয়েছে । যার মধ্যে হুমায়ূন চরিত্রটি অন্যতম ।
ফারুক আহমেদ, ভীষণ অভিজ্ঞ এবং দুর্দান্ত একজন অভিনেতা । ইদ্রিস আলী'র চরিত্রটির একটি অংশ আমার বেশ ইন্টারেস্টিং ব্যাপার লেগেছে, তা হলো প্রথম দিকে ক্যারেকটার ইন্ট্রোডাকশনের পর সোফায় বসে অদ্ভুত ভঙ্গিতে আম খাওয়ার দৃশ্যটি । অপর দিকে তার ভাগিনা বসা, যে কিনা সে দৃশ্যটি দেখে মনে মনে কিছুটা বিরক্ত অনুভব করে, সেটি তার মুখভঙ্গি দেখে বোঝা যায় ।
আবদুল্লাহ আল সেন্টু, কামাল চরিত্রে তিনি এক কথায় বেস্ট । ফার্স্ট টু লাস্ট, পুরো গল্প জুড়ে তিনিই যেন মূল ।
পুলিশ পরিদর্শক কামরুল চরিত্রের পাশাপাশি উপ - পুলিশ পরিদর্শক চরিত্রে অভিনয় করা ভাইটির নাম জানিনা, কিন্তু ওনাকে আমি আগে দেখেছি, তিনি টিকটকে বেশ জনপ্রিয়, সবসময় এক গানেই বেশিরভাগ নাচেন । আবদুল চরিত্রে মোটামোটি ।
এবার আসছি ক্যামেরার বিষয়ে :
ডি ও পি'র দায়িত্বে ছিলেন বিদ্রোহী দীপন । দাদা'র সিনেমাটোগ্রাফির হাত বেশ ভালো । ভিকি ভাইয়ের আগের কিছু কাজে ওনার জাদু দেখেছি । শুক্লপক্ষেও ভালো ছিল তবে আরো ভালো আশা করছিলাম । বিশেষ করে, প্রথম দিকের শট গুলো ভালো লাগেনি, হয়ত ফ্রি হ্যান্ড করা হয়েছিল ।
অন্যান্য টেকনিক্যাল অ্যাসপেক্টস্ :
পাবলিসিটি ডিজাইনের দায়িত্বে ছিলেন আমাদের পোস্টার বয় সাজ্জাদুল ইসলাম সায়েম । পোস্টারটি তামিল সিনেমা 'ইমাইক্কা নোডিগাল' এর পোস্টারের সাথে মিল থাকলেও পোস্টার কোয়ালিটি ভালো হয়েছে ।
আল আমিন ভাইয়ের শিল্প নির্দেশনা খুব ভালো লেগেছে । আশরাফুল আলম এর রং বিন্যাস অ্যাভরেজ । রুবামা ফাইরুজের প্রস্থেটিক 'পেট কাটা শ'র মতোই দারুন । জাহিদ নীরবের আবহ সঙ্গীত ভালো । ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট্'স ও সম্পাদনা করেছেন অর্ণব হাসনাত । কয়েকটি দিক ছাড়া গল্পের ফ্লো'র সাথে সম্পাদনা ঠিক রেখেছেন ।
এবার আসছি পরিচালনায়, পরিচালক চাইলে সবার থেকে আরো ভালো পারফরমেন্স বের করে আনতে পারতেন । তবে ওনাকে যেহেতু সবাই মি: টুইস্ট নামেই চেনে, তিনি ও বরাবরের মতো এই প্রজেক্টেও টুইস্টের কোনো কমতি রাখেননি । ক্লাইমেক্সে দুর্দান্ত করেছেন ।
এই দুইদিনে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে বাংলাদেশে প্রথম ভিকি জাহেদ-ই ''ভিকিভার্স'' তৈরি করতে চলেছেন, তার জন্য শুভ কামনা । এবং আশা করছি, শুক্লপক্ষের পরবর্তী অংশে অসম্পূর্ণ সব চরিত্র পূর্ণ করা হবে । পাশাপাশি 'পূনর্জন্ম ৩' প্রজেক্টের অপেক্ষায় ...
#Chorki
শুক্লপক্ষ ওয়েব ফিল্মে প্রতি শুক্লপক্ষের রাতে একটি করে মেয়ে হারাচ্ছে যাদের কোনো হদিসই পাওয়া যাচ্ছে না যেকারণে পুলিশ প্রশাসন সঠিক তদন্তই করতে পারছে না। কারা কিংবা কে করছে এসব? কেনই বা করছে জানতে হলে দেখতে হবে।
শুক্লপক্ষ'র গল্প শুরু থেকে শেষাংশের একটু আগ পর্যন্ত মুটামুটি গল্পের গতি অনুযায়ী চলছিলো কিন্তু শেষাংশ এবং এন্ডিং এ যেই ক্লাইম্যাক্স দেখানো হয়েছে সেটা এই কাজটাকে একেবারে জমিয়ে দিছে। খুবই দারুণ ছিলো ক্লাইম্যাক্সটা। আপনি যদি এই ক্লাইম্যাক্স সম্পর্কে আগে থেকে বিন্দু মাত্র অবগত না থেকে কাজটা দেখতে বসেন তাইলে ক্লাইম্যাক্স এ আপনি নড়েচড়ে বসতে পারেন এটা নিশ্চিত বলতে পারি৷
রোশান, শরিফ মুটামুটি এবং খায়রুল বাসার, সুনেরাহ এবং শরিফ সিরাজ গল্প অনুযায়ী ভালোই তবে নজর কেড়েছে আব্দুল্লাহ আল সেন্টু এবং সারপ্রাইজিং চরিত্রটা।
বিদ্রোহী দিপনের সিনেমাটোগ্রাফি সুন্দর, জাহিদ নিরব এর ব্যাকগ্রাউন্ড চলনসই। ভিকি জাহেদের উপস্থাপনায় ভালোই একটি ওয়েব ফিল্ম তবে আরও ভালো হতে পারতো কারন তার প্রতি দর্শকের প্রত্যাশা আরও বেশি। আর খুব সম্ভবত ভিকি জাহেদ একটা ইউনিভার্স তৈরি করতে যাচ্ছে যেটা আমাদের দেশের সিনেমা কিংবা ওটিটির ক্ষেত্রে একেবারে নতুন বলা যায়।
এই ফিম্লে যেই অসাধারণ ক্লাইম্যাক্স এবং ইউনিভার্স এরও যে একটা ব্যাপার আছে সেটার জন্যতো অবশ্যই রেকোমেন্ড করাই যায়। তাই আপনিও দেখেন, দেখে জানান আপনার অনুভূতি....