আয়কর নির্দেশিকা ২০২২-২০২৩ | Income Tax Nirdeshika 2022-2023

আয়কর নির্দেশিকা ২০২২-২০২৩ | Income Tax Nirdeshika 2022-2023

 আয়কর নির্দেশিকা  ২০২২-২০২৩  | Income Tax Nirdeshika 2022-2023  



#আয়কর2022-2023অর্থ

বছরের জন্য.....

Link: www.etaxnbr.gov.bd


নিয়মানুযায়ী যাদের বেসিক (মূল বেতন) ১৬,০০০ টাকা বা তদুর্ধ্ব তাদের সবাইকে আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। এখানে মনে রাখতে হবে যে রিটার্ন দাখিল করা আর ইনকাম ট্যাক্স বা আয়কর পরিশোধ করা দুটি এক জিনিস নয়। উপরোক্ত বেসিক এর আওতাধীন সবাইকে রিটার্ন দাখিল করতে হবে এটা সত্য কিন্তু তাদের আয় যদি করসীমা অতিক্রম না করে তাহলে আয়ের উপর আয়কর বা ইনকাম ট্যাক্স দিতে হবে না, শুধুমাত্র রিটার্ন দাখিল করলেই চলবে। আয় যদি করসীমা অতিক্রম করে তাহলেই কেবল আয়কর দিতে হবে। আর এই করযোগ্য আয় কিভাবে বের করবেন সে বিষয়ে অ্যাডভোকেট এম. এ বাশার আহমেদ


আয়কর হিসাব করার ৫টি সহজ ধাপ:


১) সমুদয় আয়ের উপর কর দিতে হয়না, কাজেই ১ম ধাপে আমরা করযোগ্য আয় বের করা শিখবো;


২) ২য় ধাপে উক্ত করযোগ্য আয়ের উপর কত টাকা আয়কর আসবে (প্রাথমিক হিসাব) তা বের করবো;


৩) ৩য় ধাপে সর্বোচ্চ আয়কর রেয়াত পাওয়ার জন্য সর্বনিম্ন কত টাকা বিনিয়োগ করতে হবে, তা বের করবো;


৪) ৪র্থ ধাপে উক্ত সর্বনিম্ন পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করলে কত টাকা আয়কর রেয়াত পাবেন, তা বের করবো; এবং


৫) ৫ম ধাপে প্রাথমিক আয়কর হিসাব হতে রেয়াত বাদ দিয়ে চুড়ান্ত প্রদেয় আয়কর বের করবো।


১ম ধাপঃ ১ম ধাপে জেনে নেওয়া যাক কোন কোন আয় করযোগ্য


১) মূল বেতন (Basic Salary) : পুরোটাই করযোগ্য আয়;


২) বোনাস (Eid Bonus/Incentive Bonus): পুরোটাই করযোগ্য আয়;


৩) বাসা ভাড়া: মূল বেতন (Basic Salary) এর ৫০% বা বছরে ৩ লক্ষ টাকা- এই দুইয়ের মধ্যে যেটি কম, সেই পরিমাণ অর্থের উপর কর দিতে হবেনা। কাজেই করযোগ্য আয় নিরূপনের সময় আমার প্রাপ্ত বাসা ভাড়া থেকে সেই পরিমাণ অর্থ (অর্থাৎ Basic Salary এর ৫০% বা বছরে ৩ লক্ষ টাকা- এই দুইয়ের মধ্যে যেটি কম) বাদ দিয়ে করযোগ্য আয় বের করতে হবে;


৪) চিকিৎসা ভাতা: মূল বেতন (Basic Salary) এর সর্বোচ্চ ১০% বা বাৎসরিক ১,২০,০০০ টাকা – এই দুয়ের মধ্যে যেটি কম, তা আপনার প্রাপ্ত চিকিৎসা ভাতা থেকে বাদ দিয়ে করযোগ্য আয় বের করতে হবে;


৫) যাতায়াত ভাতা (যারা গাড়ী সুবিধা পান না): বাৎসরিক সর্বোচ্চ ৩০,০০০ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত অর্থাৎ আপনার প্রাপ্ত যাতায়াত ভাতা হতে ৩০,০০০ টাকা বাদ দেয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকবে তা আপনার করযোগ্য আয়;


৬) যাতায়াত ভাতা (যারা গাড়ী সুবিধা পান): আপনি যেই পরিমাণ অর্থই পাইনা কেন, আমার মূল বেতনের (বেসিক স্যালারী) ৫% অথবা বাৎসরিক ৬০,০০০ টাকা – এ দুইয়ের মধ্যে যেটি সর্বোচ্চ- তা আপনার করযোগ্য আয় হসেবে বিবেচিত হবে;


৭) প্রভিডেন্ড ফান্ড (যদি অনুমোদিত হয়): শুধুমাত্র নিয়োগকর্তার অংশ করযোগ্য আয় হিসেবে গণ্য করতে হবে;


৮) উপরোক্ত আয়ের বাইরে অন্য যেকোন আয় যেমন বিনোদন ভাতা, বাৎসরিক ছুটির সাথে প্রাপ্য ভাতা, ওভার টাইম, হাউজ মেইনটেন্যান্স ভাতা, সুদ আয়, ইত্যাদি আয় ১০০% করযোগ্য আয়।


২য় ধাপঃ করযোগ্য আয়ের উপর কত টাকা আয়কর আসবে (আপনি কোনো বিনিয়োগ করেননি ধরে)


ক) প্রথমেই আসি আপনার করমুক্ত আয়সীমা কত অর্থাৎ আপনার করযোগ্য আয় কত টাকার কম হলে আপনাকে কোনো করই দিতে হবে না:


খ) আপনি ৬৫ বছরের কম বয়সী পুরুষ করদাতা হলে আপনার জন্য করমুক্ত আয় সীমা ২.৫০ লক্ষ টাকা;


গ) আপনি মহিলা করদাতা বা আপনার বয়স ৬৫ বছর বা তদুর্ধ্ব (নারী, পুরুষ নির্বিশেষে) হয়, তাহলে আপনার জন্য করমুক্ত আয় সীমা ৩.০০ লক্ষ টাকা;


ঘ) আপনি প্রতিবন্ধী হলে আপনার জন্য করমুক্ত আয় সীমা ৪.০০ লক্ষ টাকা;


ঙ) আপনি গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হলে আপনার জন্য করমুক্ত আয় সীমা ৪.২৫ লক্ষ টাকা;


চ) যদি আপনার কোনো প্রতিবন্ধী সন্তান থাকে বা আপনি কোনো প্রতিবন্ধী সন্তানের অভিভাবক হলে আপনার করমুক্ত আয়সীমা উপরের চার ক্যাটাগরীর যে ক্যাটাগরিতে আপনি পড়েন, তার চেয়ে আরো ২৫০০০ টাকা বেশী হবে। এছাড়া যদি আপনারা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই করদাতা হয়ে থাকেন, তাহলে যেকোন একজন এই সুবিধা নিতে পারবেন। অর্থাৎ উপরের পাঁচ ক্যটাগরীর যে ক্যাটাগরিতেই আপনি পড়েন, আপনার করযোগ্য আয়, করমুক্ত সীমার কম হলে আপনাকে কোনো আয়কর দিতে হবেনা।


ছ) আবার যদি আপনার করযোগ্য আয়, করমুক্ত সীমার বেশী হয়, তাহলে আপনার জন্য প্রযোজ্য যে করমুক্ত সীমা, তার উপরও আপনাকে কোনো কর দিতে হবেনা। আপনাকে শুধুমাত্র কর দিতে হবে, করমুক্ত সীমার উপর অতিরিক্ত যে করযোগ্য আয় আপনার আছে তার উপর।



করের হার নিম্নরূপ:


i) করমুক্ত সীমা পরবর্তী ৪.০০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করযোগ্য আয়ের উপর কর দিতে হবে ১০% হারে (শর্ত প্রযোজ্য);

ii) পরবর্তী ৫.০০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করযোগ্য আয়ের উপর কর দিতে হবে ১৫% হারে;

iii) পরবর্তী ৬.০০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করযোগ্য আয়ের উপর কর দিতে হবে ২০% হারে;


iv) পরবর্তী ৩০.০০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করযোগ্য আয়ের উপর কর দিতে হবে ২৫% হারে; এবং

v) অবশিষ্ট আয়ের উপর কর দিতে হবে ৩০% হারে।

ধরা যাক, আপনি একজন ত্রিশ বছর বয়সী পুরুষ এবং আপনার করযোগ্য আয় ৫৬ লক্ষ টাকা, তাহলে-


ক) ১ম ২.৫০ লক্ষ টাকার উপর কর দিতে হবে না;


খ) পরবর্তী ৪.০০ লক্ষ টাকার উপর কর দিতে হবে ১০% হারে ৪০,০০০ টাকা;


গ) পরবর্তী ৫.০০ লক্ষ টাকার উপর কর দিতে হবে ১৫% হারে ৭৫,০০০ টাকা;


ঘ) পরবর্তী ৬.০০ লক্ষ টাকার উপর কর দিতে হবে ২০% হারে ১,২০,০০০ টাকা;


ঙ) পরবর্তী ৩০.০০ লক্ষ টাকার উপর কর দিতে হবে ২৫% হারে ৭,৫০,০০০ টাকা; এবং


চ) অবশিষ্ট ৮.৫০ লক্ষ টাকা (৫৬ লক্ষ – ২.৫০ লক্ষ – ৪ লক্ষ – ৫ লক্ষ – ৬ লক্ষ – ৩০ লক্ষ) আয়ের উপর কর দিতে হবে ৩০% হারে ২,৫৫,০০০ টাকা। অর্থাৎ ৫৬ লক্ষ টাকা করযোগ্য আয়ের বিপরীতে আপনাকে আয়কর দিতে হবে মোট ১২.৪০ লক্ষ টাকা (যদি আপনি কোন বিনিয়োগ করে না থাকেন)।


উপরে একটি জায়গায় লেখা হয়েছে শর্ত প্রযোজ্য। শর্তটি কি? শর্তটি হচ্ছে, আপনার যদি করযোগ্য আয় থাকে, তাহলে আপনি যে ক্যাটাগরিতে পড়েন, সেই ক্যাটাগরিতে আপনার আয়কর হিসাব করার পর যদি দেখা যায়, আপনার আয়কর মিনিমাম প্রদেয় আয়করের চেয়ে কম এসেছে, তাহলে আপনাকে মিনিমাম আয়করটা দিতেই হবে। এখন তাহলে দেখে নেই, মিনিমাম আয়কর কত?


১) যদি আপনার বসবাস ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন বা ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন বা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় হয়, তাহলে ৫০০০ টাকা;


২) যদি আপনার বসবাস বাংলাদেশের অন্য যেকোনো সিটি কর্পোরেশন এলাকায় হয়, তাহলে ৪০০০ টাকা;


৩) যদি আপনার বসবাস সিটি কর্পোরেশন এলাকার বাইরে হয়, তাহলে ৩০০০ টাকা।


একটা উদাহরণ দিয়ে বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করি:


মি. রিয়াজ (ছদ্মনাম) একজন ৬৫ বছরের কম বয়সী পুরুষ, যার বসবাস ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এবং এই আয় বছরে তার করযোগ্য আয় হয়েছে ২,৭৮,০০০ টাকা। তাহলে তার করমুক্ত আয় সীমা ২,৫০,০০০ টাকা হবার কারণে তাকে প্রথম ২,৫০,০০০ টাকার উপর কোনো কর দিতে হবেনা। পরবর্তী ২৮,০০০ টাকার (২,৭৮,০০০ টাকা মাইনাস ২,৫০,০০০ টাকা) উপর ১০% হারে রিয়াজ সাহেবের কর আসবে ২,৮০০ টাকা। কিন্তু যেহেতু তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বসবাস করেন, তাই তাকে ন্যূনতম ৫,০০০ টাকা কর দিতেই হবে।


তবে আবার বলছি যদি করযোগ্য আয়, করমুক্ত আয়সীমার কম হয়, তাহলে কোনো করই দিতে হবেনা। আবার যদি আপনি ন্যূনতম আয়করদাতা হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি বিনিয়োগজনিত কোন আয়কর রেয়াত সুবিধা পাবো না।


৩য় ধাপঃ সর্বোচ্চ আয়কর রেয়াত পাওয়ার জন্য সর্বনিম্ন কত টাকা বিনিয়োগ করতে হবে


আপনি কত টাকা কর রেয়াত সুবিধা পাবেন, তা নির্ভর করে আপনি সংশ্লিষ্ট অর্থবছরে কত টাকা নতুন বিনিয়োগ করেছেন তার উপর। কিন্তু এর মানে এই নয় যে আপনি আনলিমিটেড বিনিয়োগ করলেই আনলিমিটেড কর মওকুফ বা রেয়াত সুবিধা পাবেন। আপনি আপনার আয়ের সব টাকাই বিনিয়োগ করতে পারবেন, চাইলে ঋণ নিয়েও বিনিয়োগ করতে পারবেন (!!!), কিন্তু একটি নির্দিষ্ট অংকের বাইরে যত টাকাই বিনিয়োগ করেন না কেন, একটি নির্দিষ্ট অংকের বেশী কর রেয়াত সুবিধা আপনি পাবেন না। এজন্য এই ধাপটির নাম দেওয়া হয়েছে-সর্বোচ্চ আয়কর রেয়াত পাওয়ার জন্য সর্বনিম্ন কত টাকা বিনিয়োগ করতে হবে।


এই নিয়মটি খুবই সহজ। আপনার করযোগ্য আয় হতে প্রভিডেন্ড ফান্ডে নিয়োগকর্তার অংশ (যদি প্রভিডেন্ড ফান্ডটি NBR কর্তৃক অনুমোদিত হয়) বাদ দিলে যা থাকবে, তার সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত যদি আপনি বিনিয়োগ করেন, তাহলে আপনি সর্বোচ্চ কর রেয়াত সুবিধা পাবেন। ধরুন, আপনার করযোগ্য আয় ২১.০০ লক্ষ টাকা যার মধ্যে প্রভিডেন্ড ফান্ডে নিয়োগকর্তার অংশ ১.০০ লক্ষ টাকা। তাহলে, আপনাকে সর্বোচ্চ কর রেয়াত সুবিধা পেতে হলে ৫.০০ লক্ষ টাকা [(২১.০০ লক্ষ টাকা – ১.০০ লক্ষ টাকা) X ২৫%] নতুন বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট আয় বছরে করতে হবে।


৪র্থ ধাপঃ বিনিয়োগের উপর কত টাকা আয়কর রেয়াত পাবেন


– ১ম ২.৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ১৫%


– পরবর্তী ৫.০০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ১২%


– এর বেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অর্থাৎ ৭.৫০ লক্ষ টাকার বেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ৭.৫০ লক্ষ টাকার অতিরিক্ত টাকার উপর ১০%।


উদাহরণঃ


১) ধরা যাক সর্বোচ্চ আয়কর রেয়াত পেতে আপনি বিনিয়োগ করেছেন ৯.০০ লক্ষ টাকা, তাহলে,


– ১ম ২.৫০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগের বিপরীতে ১৫% হারে রেয়াত পাবেন ৩৭,৫০০ টাকা [২,৫০,০০০ X ১৫%]


– পরবর্তী ৫.০০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগের বিপরীতে রেয়াত পাবেন ৬০,০০০ টাকা [৫,০০,০০০ X ১২%]


– বাকী ১.৫০ লক্ষ টাকা [৯.০০ লক্ষ – ২.৫০ লক্ষ – ৫.০০ লক্ষ] বিনিয়োগের বিপরীতে রেয়াত পাবেন ১৫,০০০ টাকা [১,৫০,০০০ X ১০%]


অর্থাৎ সব মিলিয়ে আপনি কর রেয়াত পাবেন ১,১২,৫০০ টাকা [৩৭,৫০০ + ৬০,০০০ + ১৫,০০০]।


২) ধরা যাক সর্বোচ্চ আয়কর রেয়াত পেতে আপনি বিনিয়োগ করেছেন ৬.০০ লক্ষ টাকা, তাহলে,


– ১ম ২.৫০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগের বিপরীতে রেয়াত পাবেন ৩৭,৫০০ টাকা [২,৫০,০০০ X ১৫%]


– পরবর্তী ৩.৫০ লক্ষ টাকা [৬.০০ লক্ষ – ২.৫০ লক্ষ ] বিনিয়োগের বিপরীতে রেয়াত পাবেন ৪২,০০০ টাকা [৩,৫০,০০০ X ১২%]


অর্থাৎ সব মিলিয়ে আপনি কর রেয়াত পাবেন ৭৯,৫০০ টাকা [৩৭,৫০০ + ৪২,০০০]।


৩) ধরা যাক সর্বোচ্চ আয়কর রেয়াত পেতে আপনি বিনিয়োগ করেছেন ২.০০ লক্ষ টাকা, তাহলে,


– ২.০০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগের বিপরীতে রেয়াত পাবেন ৩০,০০০ টাকা [২,০০,০০০ X ১৫%]


৫ম ধাপঃ চূড়ান্ত প্রদেয় আয়কর বের করা


২য় ধাপে যে প্রাথমিক আয়কর বের করেছিলাম, তা থেকে ৪র্থ ধাপে বের করা আয়কর রেয়াত বাদ দিয়ে চূড়ান্ত প্রদেয় আয়কর বের করতে হবে। আয়কর হিসাব করা শেষ।


আয়কর সংক্রান্ত আরো কিছু টুকিটাকি জিজ্ঞাসা


প্রশ্ন-১: আয়কর দিবো আবার সারচার্জও দিবো?


উত্তর: জ্বি, আপনার নীট সম্পদের (মোট সম্পদ – মোট দায়) পরিমাণ যদি ৩ কোটি টাকার অধিক হয়, তাহলে আয়কর তো দিবেনই, সাথে সারচার্জও দিতে হবে। তবে এই বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া স্বত্ত্বেও যদি আপনার করযোগ্য আয় না থাকে, তাহলে অবশ্য কোনো সারচার্জ দিতে হবেনা।


নীট সম্পদের পরিমাণ যত বেশী হবে, সারচার্জের পরিমানও শতকরা হিসাবে (আয়করের উপর) বাড়তে থাকবে।


১) নীট সম্পদ ৩.০০ কোটি পর্যন্ত –শূন্য;


২) নীট সম্পদ ৩.০০ কোটির বেশী কিন্তু ৫ কোটির বেশী নয় — ১০% (আয়করের উপর);


৩) নীট সম্পদ ৫ কোটির বেশী কিন্তু ১০ কোটির বেশী নয় — ১৫% (আয়করের উপর);


৪) নীট সম্পদ ১০ কোটির বেশী কিন্তু ১৫ কোটির বেশী নয় — ২০% (আয়করের উপর);


৫) নীট সম্পদ ১৫ কোটির বেশী কিন্তু ২০ কোটির বেশী নয় — ২৫% (আয়করের উপর);


৬) নীট সম্পদ ২০ কোটির উপর যেকোনো অংকের জন্য — ৩০% (আয়করের উপর)।


ধরা যাক, আপনার আয়কর এসেছে ৭৫ হাজার টাকা এবং আপনার নীট সম্পদের পরিমাণ ১১ কোটি টাকা। তাহলে ৭৫ হাজার আয়কর দিবেন, সাথে সারচার্জ দিবেন ১৫ হাজার টাকা (৭৫ হাজার টাকার ২০%)।


আরেকটি বিষয় হচ্ছে, আপনার নীট সম্পদের পরিমাণ ৩ কোটি টাকা অতিক্রম করলে আপনার প্রদেয় সারচার্জের পরিমাণ ৩ হাজার টাকার কম হলেও আপনাকে ন্যূনতম ৩ হাজার টাকা সারচার্জ দিতেই হবে।


প্রশ্ন-২: আমার করযোগ্য আয় নেই, তাহলেও কি আমাকে আয়কর রিটার্ণ দাখিল করতে হবে?


উত্তর: আয়কর অধ্যাদেশের ৮০ ধারা অনুযায়ী, আপনার করযোগ্য আয় না থাকলেও নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ণ দাখিল করতে হবে-


১) যদি আয় বছরের শেষ তারিখে আপনার মোট পরিসম্পদের (Gross Wealth) পরিমাণ ২৫ লক্ষ টাকার বেশী হয়;


২) যদি আয় বছরের শেষ তারিখে আপনি কোনো মোটর গাড়ির (জীপ বা মাইক্রোবাসসহ) মালিক হন;


৩) যদি আয় বছরে কোন সিটি কর্পোরেশন এলাকায় কোন গৃহ-সম্পত্তি বা এপার্টমেন্টের মালিক হন বা গৃহ-সম্পত্তি বা এপার্টমেন্টে বিনিয়োগ করে থাকেন।


তবে পরপর তিনবছর রিটার্ণ দাখিল করার পর ডেপুটি কমিশনার অফ ট্যাক্সেস বরাবর আবেদন করে, রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা থেকে নিষ্কৃতি পেতে পারেন।


প্রশ্ন-৩: ধরা যাক, একজনের ই-টিন নেই। তার স্থায়ী ঠিকানা গাজীপুর, বর্তমান ঠিকানা অস্থায়ী ভিত্তিতে ঢাকা। তিনি ব্যাংকে চাকুরী করেন। তার প্রশ্ন হচ্ছে, তিনি স্থায়ী ঠিকানায় ইনকাম ট্যাক্স ফাইল করতে পারবেন কিনা?


উত্তর: ট্যাক্স কোন জোনে এবং সার্কেলে দিতে হবে, তা আপনার বর্তমান বা স্থায়ী ঠিকানার উপর নির্ভর করেনা। এটি পুরোপুরি নির্ভর করে আপনি কি ধরণের পেশায় যুক্ত এবং আপনার কর্মস্থল কোথায় তার উপর। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, এই অর্থ বছরের জন্য আয়কর দিতে হলে, আপনাকে ৩০ শে জুনের মধ্যেই E-TIN করতে হবে।

About the author

Daud
Hey! I'm Daud, Currently Working in IT Company BD. I always like to learn something new and teach others.

Post a Comment

To avoid SPAM, all comments will be moderated before being displayed.
Don't share any personal or sensitive information.