ফেসবুক মার্কেটিং কী | Facebook Marketing
লকডাউনে কী করে সময় কাটানো যায় তা ভাবতে ভাবতেই সুগন্ধি মোমবাতির একটা ছোটখাটো ব্যবসা নামিয়ে ফেলে প্রপা। প্রথম প্রথম দুই-একটা অর্ডার আসলেও ধীরে ধীরে সেই সংখ্যা নিচের দিকে যেতে থাকে৷ অথচ তারই বান্ধবী পৃথার পোস্টারের ব্যবসা বেশ রমরমা। কীভাবে পৃথার এই ছোট বিজনেস বড় বড় সব প্রতিযোগীদের হারিয়ে এখনো অনলাইন মার্কেটে টিকে আছে প্রপা তা জানতে চাইলে পৃথা দুষ্টু হাসি হেসে বলে, “সবই ফেইসবুক মার্কেটিং -এর কামাল!” আপনি যদি আপনার ব্যবসা অথবা যেকোনো কাজকে আরো বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চান, তাহলে ফেইসবুক মার্কেটিং -এর কোনো জুড়ি নেই।
এই মার্কেটিং ব্যবস্থায় পেইড বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে অর্গানিক পোস্টের মাধ্যমেও আপনি আপনার ব্র্যান্ডকে প্রমোট করতে পারবেন এবং অধিক পরিমাণ পণ্যের বিক্রি নিশ্চিত করতে পারবেন। তাহলে চলে যাওয়া যাক আজকের মূল আলোচনায়: ফেসবুক মার্কেটিং কি?
ফেসবুক মার্কেটিং কি
ফেসবুক মার্কেটিং হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যা আপনাকে আপনার পণ্য বা সেবা সম্পর্কে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের অবগত করতে সাহায্য করে। ফেসবুক মার্কেটিং ব্যবসার জন্য বর্তমান ও সম্ভাব্য গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখতে এবং পেইজ ভিজিটরদের আগ্রহ ধরে রাখতে তাদের সাথে একটি যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে পণ্য সম্পর্কে তথ্য প্রদান করাই হল এর প্রধান কাজ, যাতে পৃথিবীর নানা প্রান্তের মানুষ সেই পণ্য বা সাইট সম্পর্কে জানতে পারে।
প্রতিদিন প্রায় ১.৫ বিলিয়ন মানুষ একবার হলেও ফেসবুকে ঢুঁ মারেন। আর প্রতিমাসে এই সংখ্যাটা যেয়ে দাঁড়ায় ২.৩ বিলিয়নে। সেখানে প্রায় ৭ মিলিয়নেরও বেশি সক্রিয় কোম্পানি এই বিশাল দর্শকদের জন্য বিজ্ঞাপন তৈরি করে। এই সংখ্যাগুলো দেখেই বুঝা যায় ফেসবুক মার্কেটিং কি পরিমাণ গুরুত্বপূর্ণ। গত এক দশকে, ফেসবুক ইন্টারনেট জগতের সবচেয়ে বড় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সবচেয়ে বড় মার্কেটপ্লেসে পরিণত হয়েছে এবং ব্যবসা প্রচারের জন্য সবচেয়ে নির্ভরশীল স্থান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
আপনি চাইলেই লিঙ্গ, বয়স, অবস্থান, চাকরি বা আগ্রহের উপর ভিত্তি করে ফেসবুকের মাইক্রো-টার্গেটিং বৈশিষ্ট্যগুলো কাজে লাগিয়ে সঠিক টার্গেট ভিজিটরদের কাছে আপনার পণ্যের বিজ্ঞাপন পৌঁছা দিতে পাড়েন।
ফেইসবুক মার্কেটিং -এর সুবিধা:
সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তু:
আপনি ইতোমধ্যেই হয়তো জেনে থাকবেন যে অডিয়েন্স সম্পর্কে গভীরভাবে রিসার্চ করার অনুমতি ফেসবুক তার ব্যবহারকারীদের দিয়ে থাকে।
ডেমোগ্রাফিক টার্গেটিংয়ের মাধ্যমে আপনি একটি নির্দিষ্ট আয়, শিক্ষার স্তর, জীবনের ঘটনা, সম্পর্কের স্থিতি বা চাকরিসহ যেকোনো ধরনের অডিয়েন্স নির্বাচন করতে পারবেন। এমনকি আপনি গ্রাহকদের তাদের পছন্দের বিনোদন, খেলাধুলা, শখ ও কেনাকাটা করার অভ্যাসের মতো আগ্রহগুলো থেকেও তাদের সম্পর্কে জানতে পারবেন।
ওয়েবসাইট ট্রাফিক বৃদ্ধি:
এই প্ল্যাটফর্মের সাহায্যে আপনি অডিয়েন্সদের সরাসরি আপনার পেইজ বা ওয়েবসাইট ভিজিট করাতে পারবেন। যারা ফেইসবুক মার্কেটিং -এর ফলে আপনার ওয়েবসাইট ভিজিট করবে, তারা অর্গানিক ইউজারদের থেকে বেশি জেনেই এখানে আসবেন কারণ তারা আপনার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেই পণ্য সম্পর্কে জেনে নিয়েছেন।
তাই তাদের মনে আপনার বিশ্বাসযোগ্যতা বেশি। সেজন্য আপনার পণ্য সম্পর্কে আরও জানতে আপনার ফলোয়ারদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য উৎসাহিত করুন৷ এছাড়াও, যে ওয়েবসাইটটি লিঙ্ক করবেন সেখানে যদি কোনো ছবি দেওয়া থাকে, তাহলে ফেসবুক তা দিয়েই একটা বড় কভার ফটো তৈরি করে নেয়। তাই আপনার ওয়েবসাইটের হোম পেইজ অথবা যেই পেইজটা লিংক করবেন সেখানে একটা আকর্ষণীয় ছবি ব্যবহার করুন। এটি অনেক ব্যবহারকারীর দৃষ্টি আকর্ষণ করবে এবং ওয়েবসাইট ট্র্যাফিক বাড়াতে সাহায্য করবে।
বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন ফরম্যাট:
বর্তমানে ফেসবুক অ্যাড হলো ডিজিটাল মার্কেটিং -এর সেরা ও সবচেয়ে কার্যকরী অস্ত্র। খুব কম খরচে টার্গেট কাস্টমারের কাছে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজন দৃষ্টিনন্দন অ্যাড তৈরি করা। আর ফেইসবুক মার্কেটিং -এ পাবেন ইমেজ, ক্যারোজেল, পোল, ভিডিও, স্লাইডশোর মতন হরেকরকম বিজ্ঞাপন ফরম্যাট।
গ্রাহকদের সমর্থন:
যেকোনো ব্যবসার ক্ষেত্রে আপনার কাজ হচ্ছে পণ্য বিক্রয়ের সময়, বিক্রয়ের আগে ও পরে কাস্টমারকে সহযোগিতা করা। কাস্টমার আপনার কাছ থেকে একবার কিছু কিনে নিলেই তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা যাবে না বরং সবসময় অনলাইনে কানেকটেড থাকতে হবে। কারণ আপনি চাইবেন আপনার পণ্য আরো বেশী এবং বার বার বিক্রি করতে। আর সেজন্যই কাস্টমারের সাথে আপনার নিয়মিত যোগাযোগ রাখা প্রয়োজন।
ফেসবুকের ক্রিয়েটর স্টুডিওতে যেয়ে অটোমেটেড রেস্পন্স অপশন থেকে আপনি খুব সহজেই অনলাইনে না থাকার পরেও গ্রাহকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন। তাছাড়া চ্যাটবট তৈরি করেও ব্যবহারকারীদের নিয়মিত করা প্রশ্নগুলোর উপর ভিত্তি করে আগেই এর উত্তর তৈরি করে রাখতে পারেন। ধরা যাক আপনি মূল্য, ডেলিভারি চার্জ, পেমেন্ট অপশন ইত্যাদি কি-ওয়ার্ড দিয়ে বেশ কিছু উত্তর সাজালেন৷
গ্রাহকদের প্রশ্নগুলোর মধ্যে যদি এই কি-ওয়ার্ডগুলো থেকে তাহলে অটোমেটিক তাদের প্রশ্নের উত্তর সেন্ড হবে। আপনার চ্যাটবট আসল কথোপকথন অনুকরণ করেই গ্রাহকের সাথে কথা বলবে। ফলস্বরূপ, আপনার কাজ অনেকটাই কমে যাবে এবং আপনি আপনার ব্যবসার অন্যান্য দিকগুলোয় মনোযোগ দিতে পারবেন।
ফেইসবুক মার্কেটিং কত প্রকার?
ফেইসবুক মার্কেটিং করার জন্য কিন্তু খুব বেশি ঝামেলা পোহাতে হয় না। সবার প্রথমে দরকার একটা ফেসবুক পেইজ। চাইলে আপনি নিজের ব্যক্তিগত আইডি থেকেও কাজ করতে পারেন, তবে বিজনেস পেইজ -এর সুবিধাগুলো আপনি পাবেন না।
ফ্রি ও পেইড, এই দুই ধরনের ফেইসবুক মার্কেটিং রয়েছে। আপনি আপনার ব্যবসার ধরন অনুযায়ী যেকোনো ফেইসবুক মার্কেটিং প্যাকেজ বেছে নিতে পারবেন।
ফ্রি ফেইসবুক মার্কেটিং:
ফ্রি ফেইসবুক মার্কেটিং -এর মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন বিজ্ঞাপন ফরম্যাট ব্যবহার করে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে পারেন। একদম বিনামূল্যে এই মার্কেটিং করার কাজ কিন্তু খুবই সহজ। প্রথমেই আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের ধরন অনুযায়ী একটি ফেইসবুক পেইজ খুলে নিবেন। এরপর আপনার প্রতিষ্ঠানের নাম, প্রোফাইল পিকচার, কভার ফটো ও বর্ণনা দিয়ে পেইজটাকে সাজিয়ে নিন। পেইজ সেটাপ শেষে যে পণ্যের মার্কেটিং করতে চান, তা আকর্ষণীয়ভাবে আপনার পোস্টে তুলে ধরুন। এরপর পরিচিত সবাইকে আপনার পেইজ ফলো করার জন্য ইনভাইটেশন পাঠাতে পারেন। এরপর যেই পোস্টটা দিয়েছেন তা নানান সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন। চাইলে বন্ধুদেরও শেয়ার করতে বলতে পারেন। এভাবে কিন্তু কোনো অর্থ ছাড়াই অধিক সংখ্যক মানুষের কাছে প্রচারণা চালানো সম্ভব৷ এর পাশাপাশি আপনার সার্ভিসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ গ্রুপে যুক্ত হয়ে সেখানেও প্রচারণা চালাতে পারেন। আরো কিছু ফ্রি মার্কেটিং আইডিয়া:
- লাইভ ভিডিও এবং ইভেন্ট তৈরি করা।
- সার্ভিসের সাথে মানানসই ওয়েবিনার চালু।
- ইন্ডাস্ট্রি বা নেটওয়ার্কিং ইভেন্টে যাওয়া।
- সোশ্যাল মিডিয়া কন্টেস্ট ও গিভ্যাওয়ের আয়োজন করা।
- কাস্টমার রেফারেল প্রোগ্রাম চালু।
কেন শিখবো ফেইসবুক মার্কেটিং:
- আপনার গ্রাহকরা তাদের দিনের একটি উল্লেখযোগ্য সময় ফেসবুকে ব্যয় করেন।
- টার্গেটেড অডিয়েন্সকে লক্ষ্য করে বিজ্ঞাপন দেওয়ার ফলপ্রসূ প্ল্যাটফর্ম।
- কম খরচে অ্যাড দেওয়া যায়।
- এটি দ্রুততার সাথে ব্র্যান্ড সচেতনতা বাড়ায় ও বাজেটবান্ধব।
- ওয়েবসাইটের ট্রাফিক, আয়, বিক্রয় এবং লিড বাড়ায়।
- ওয়েবসাইটের ভিজিটর ও ট্রাফিক বাড়ায়।
- গ্রাহকদের ইমেইল তালিকা তৈরি করতে সাহায্য করে।
- ব্লগ ট্রাফিক বৃদ্ধি করে এসইও র্যাঙ্কিং বাড়াতে পারে।
- অর্গানিক মার্কেটিং -এর চেয়ে বেশী ভালো কাজ করে।
- প্রোডাক্টটাকে যত বেশি মানুষের কাছে পৌঁছানো যাবে, তত বেশি সেল জেনারেট করা যাবে।