Remastered Print | রিমাস্টার্ড প্রিন্ট কি?

Remastered Print | রিমাস্টার্ড প্রিন্ট কি?

  

  রিমাস্টার্ড প্রিন্ট কি? 


- ১৯৫০ সালের হলিউড মুভিতে ভি-এফ-এক্স এর কাজ , দারুন ক্যামেরা কোয়ালিটি দেখে আমার মতো আপনিও অজ্ঞান হয়েছেন? 

📍 ১৯৩০ , ১৯৫০ , ১৯৬০ সালের হলিউড মুভিগুলোর প্রিন্ট আজকের যুগের মুভির মতো। আবার সেগুলোর ৪কে আল্ট্রা এইচডি কোয়ালিটির প্রিন্ট ও রিলিজ করা হয়!! আমার মতো আপনিও হয়তো কখনো না কখনো এমন এক অবস্থায় পড়েছেন , যখন মাথায় এটা ঘুরতো যে , “এত আগের পুরনো ফিল্মের কোয়ালিটি আজকের যুগের ফিল্মের মতো কিভাবে পসিবল হলো? আবার গ্রাফিক্সের অনেক কাজ ও পুরনো মুভিতে দেখা যায়। এগুলো কিভাবে করা হয়?”। সব বুঝলাম! তো সেগুলোর ৪কে কিভাবে বের হয়? তখন তো ৪কে ক্যামেরাও ছিলো না। ভাব্বার বিষয় নয় কি?

আজ আমরা সে বিষয় নিয়েই আলোচনা করবো। এই প্রোসেস কে বলা হয় রিমাস্টার্ড!

📍 পুরনো দিনের মুভির কথাই ধরুন। সেগুলো শুট করা হয়েছিলো রীল ক্যামেরা দিয়ে। আপনি জেনে অবাক হবেন যে , ওই রীলের প্রতিটি ফুটেজ আকজের যুগের হাই এন্ড ডিজিটাল ক্যামেরাগুলোকেও হার মানায়। এই রিমাস্টার্ড প্রোসেস করা হয় রিস্টোরেশন প্রোসেসের মাধ্যমে। চলুন জেনে নেই কিভাবে করা হয়।

📍 প্রথমে পুরনো রীল টা হাই ডেফিনেশন স্কেনার দিয়ে স্কেন করা হয়। স্কেনারগুলো প্রায় ৮কে+ রেজুলেশনের ও হয়ে থাকে। অতি সুক্ষ্ণভাবে সেগুলো স্কেন করা হয়।

📍 এরপর সেই স্কেন করা ফাইলগুলো এবার ইডিট করা হয়। মানে মুভির ক্লিপগুলো।

📍 প্রতি মুভির একেকটি সেকেন্ডে প্রায় ২৪-২৫ টি করে ফ্রেম = ছবি থাকে। ওই ছবিগুলোকেই একে একে ইডিট করা হয়। ভাবা যায়? কত কষ্টের কাজ! ১ সেকেন্ডের ভিডিওর জন্য ২৪-২৫ টা ইমেজ এডিট করতে হয়।

📍 ধরুন এক মিনিটের ভিডিওকে রিস্টোর করা হবে রীল হতে। তখন সেটাকে স্কেন করে সেই এক মিনিটের ফুটেজ কে = ৬০ সেকেন্ড = ৬০* ২৪ (প্রতি সেকেন্ডে ২৪টি ছবি) = ১৪৪০ টি ছবি ইডিট করতে হয়। মানে এক মিনিটের ভিডিওর জন্য ১৪৪০ টি ছবি নিখুতভাবে ইডিট করতে হয়।



কি কি ইডিট করা হয়?


১। ওয়েস্ট , বার্ণ পয়েন্ট বা রীল এর যেসব অংশ নষ্ট হয়ে গিয়েছে , সেসব অংশ প্রথমে কাট ছাট করে ক্লিয়ার করা হয়। যেমন আমাদের বাড়িতে থাকা পুরনো দিনের ছবির রীল এ দেখা যায় যে সাদা হয়ে গিয়েছে বা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তো ওসব অংশ কে আগে রিস্টোর করা হয় নিজ হাতে।

২। এর পর শুরু হয় কালার গ্রেডিং। কালার , স্যাচুরেশন , কন্ট্রাস্ট , শেডো , এইচ-ডি-আর ইফেক্ট ইত্যাদি যা যোগ করলে একটি ছবিকে নতুনের মত লাগবে , তা যোগ করা হয়। এতে পুরনো একটি ফুটেজ কে নতুন রূপে দেখা যায়।

৩। এবার সিজিআই-ভিএফএক্স-কালার মিক্সিং এর ব্যাপার। এই টেকনিকে ভিডিওতে কোন নতুন বস্তু বা পুরনো কোন বস্তুকে নতুনভাবে তৈরি করা হয়। এর জন্যই ১৯৭০/১৯৮০ সালের মুভির বিভিন্ন ফুটেজের বিভিন্ন প্রাণিকে সিজিআই এর মাধ্যমে সেই প্রাণির ই মডেল বানানো হয় এবং সেই ফুটেজে বসিয়ে দেয়া হয়। দেখে মনে হয় যেনো এ তো গ্রাফিক্স এর কাজ। তাহলে ১৯৭০ সালের মুভিতে গ্রাফিক্সের কাজ কিভাবে করেছে? তখন তো কম্পিউটার ই ছিলোনা! – এভাবেই করেছে 

৪। কালার , ভিএফএক্স সব হয়ে গেলে এবার স্টাবিলাইজ করা হয়। পুরনো দিনের মুভির ক্যামেরায় স্টাবিলাইজার ইউজ করা তো হতো না। সেই টেকনোলজিও ছিলো না। যার ফলে ভিডিওতে প্রচুর শেকিনেস / কাপ-কাপি ছিল। তাই পুরো ভিডিওকে স্টাবিলাইজ করা হয়।

৫। এর পর আসে অ্যাসপেক্ট রেশিও র কাজ। ফুটেজের সাইজ কেমন হবে। কারণ , আগের দিনের টিভি বা মনিটর ছিলো স্কয়ার শেপের। এখনকার মনিটর ওয়াইড অ্যাঙ্গেল। তাই সাধারণত ওয়াইড অ্যাঙ্গেল ই করা হয় বা 16:9 এই সাইজের। এটিই স্টান্ডার্ড সাইজ মডার্ন যুগে।

৬। সব তো রেডি। একটা বাকি। তা হলো সাউন্ড। সাউন্ডের অনেক টেকনোলজী রয়েছে। যেমনঃ-

'ডিডি বা ডোলবি ডিজিটাল' আবার 'এটমস' এরকম। এগুলো এক প্রকার সাউন্ড ইফেক্টের টেকনোলজী যা ডিজিটাল ভিডিওতে ইউজ করা হয়। আগের যুগের ওই সাউন্ডগুলোর সাথে নতুন আরও অনেক সাউন্ড এড করা হয় 'ফলি আর্টিস্ট' দ্বারা।

৭। আবার সাউন্ড চ্যানেল ও আছে। অনেক সময় মুভি ডাউনলোডের পর লিখা দেখি ফাইলের নামে লিখা ডিডি৫.১ এরকম। এটার মানে একটি মেইন সাউন্ড ইফেক্ট এবং আরও ৪টি সাউন্ড ইফেক্ট দেয়া হয়। যেমন হেডফোন দিয়ে শুনলে মনে হবে যেনো ডানদিক হতে সাউন্ড আসছে। আবার বাম দিকে হতে। আবার মনে হবে যেনো উপর থেকে সাউন্ড শোনা যাচ্ছে। এগুলোকে চ্যানেল বলা হয়।

৮। সাথে যোগ হয় ফলী মিউজিক। ফলী আর্টিস্ট রা আলাদাভাবে কিছু মিউজিক ক্রিয়েট করে মুভিতে এড করার জন্য , যাতে ভিডিও দেখার সময় সাউন্ডগুলো ফিল হয়। যেমন ভিডিওতে ঝড় দেখাচ্ছে। তাই ফলী মিউজিক হিসেবে ব্যাকগ্রাউন্ডে আলাদাভাবে ঝড়ের সাউন্ড দেয়া হলো। এতে দর্শক ফিল্ম দেখার সময় সাউন্ড উপভোগ করতে পারে। মনে হয় যেনো সত্যিই ঝড় বইছে। যেমন ফিল্মে দেখালো বজ্রপাত হচ্ছে, তখন বজ্রপাতের সাউন্ড আলাদা করে যোগ করা হলো, সাগর দেখাচ্ছে, সেখানে পানির সাউন্ড আলাদা করে এড করা হয়। এই একই জিনিস

আমরা কার্টুনের ক্ষেত্রেও দেখি। কার্টুনে যেমন সাউন্ড আলাদা প্রোডিউস করে বসানো নয়, এটাও তেমন ই।

ব্যাস। এবার সব ঠিকঠাক থাকলে এই ফুটেজ কেই সেভ করা হয় ৪কে ব্লুরে প্রিন্টের জন্য। আর সেটাই বাজারে ছাড়া হয়। ঠিক এভাবেই আমরা একটি পুরনো ফালতু ফুটেজের মুভিকে একদম মডার্ন একটি মুভির রূপে দেখতে পাই। ১৯৭০ সালের মুভিও আমরা ৪কে তে দেখি এবং ভাবি "এতো সুন্দর প্রিন্ট কিভাবে?"

রিস্টোরিং প্রোসেস মোটেও সহজ নয়। একেকটি মুভি রিস্টোর / রিমাস্টার্ড করতে প্রায় ১ বছর ও লেগে যায়। যদিও টেকনোলজী অনেক উন্নত এখন। এখন অবশ্য খুব দ্রুত ই করা হয়। তবুও অন্তত ৮-৯ মাস অন্তত লাগেই। তাছাড়া একটি হলিউড মুভি রিস্টোর এর পয়সা দিয়ে দুইটি বলিউড মুভিও বানানো সম্ভব। অত্যন্ত ব্যয়বহূল প্রোসেস।

'সাসপিরিয়া (১৯৭৭), ২০০১ অ্যা স্পেস ওডিসি (১৯৬৮)' এই দুইটা ফিল্মের রিমাস্টার্ড ট্রেইলার এবং ওল্ড ট্রেইলার লিখে সার্চ দিয়ে ইউটিউবে ট্রেইলার দেখুন। আপনি পুরো চমকে যাবেন। থতমত খেয়ে যাবেন, ১৯৬৮ সালের ফিল্মের প্রিন্ট আজকের যুগের ফিল্মের প্রিন্টের চেয়েও ১০০ গুণ জোশ এবং এটা ৮কে রেজুলেশনেও বাজারে ছেড়েছিলো ওয়ার্নার ব্রোস কোম্পানি। সুতরাং, টেকনোলজির উন্নতি অনেক আগে থেকেই হতে শুরু করেছে। আমি এবং আপনিই শুধু এগুলোর খবর রাখিনা!

ধন্যবাদ যদি আর্টিকেল টি আপনার ভালোলেগে থাকে। সম্পূর্ণ আর্টিকেল টি আমার নিজ পর্যবেক্ষণ হতে লিখা। ভুল ত্রুটি মার্জনীয় 


Credit #MLWBD এমএলডব্লিউবিডি  





About the author

Daud
Hey! I'm Daud, Currently Working in IT Company BD. I always like to learn something new and teach others.

Post a Comment

To avoid SPAM, all comments will be moderated before being displayed.
Don't share any personal or sensitive information.