Surongo Bangla Movie Review:
বড় পর্দায় তার অভিষেকটা যে আতস কাঁচের তলায় থাকবে, সব ত্রুটি বিচ্যুতি যে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরিমাপ করা হবে, সেটা আফরান নিশো জানতেন। জানতেন, কোথাও কোনো ভুলচুক পেলে শূলে চড়ানোর জন্য প্রস্তুত থাকবে অনেকেই। নিশো অবশ্য নির্ভার ছিলেন। সিনেমা মুক্তির আগে বলেছিলেন, 'মিডিয়াম যেটাই হোক, করতে তো হবে অভিনয়। সেটা সব জায়গায়ই এক'। নিজের অভিষেক সিনেমায় নিশো সেই 'অভিনয়'টাই করলেন। তুখোড় সেই অভিনয়। যে নিশোকে ছোট পর্দায় দেখে মুগ্ধতা জাগতো, সেই অভিনয়। মাধ্যমটা বদলে গেল, পর্দা বড় হলো, কিন্তু নিশোর 'ওয়ান ম্যান শো' তে ছেদ পড়লো না কোনো।
সুড়ঙ্গে নিশো এলেন মাসুদ হয়ে। এই মাসুদ কিন্তু খারাপ মানুষ নন। ইলেক্ট্রিশিয়ান হিসেবে কাজ করেন। অকস্মাৎ প্রেমে পড়েন, সংসারও পেতে বসেন। কিন্তু জীবনের কঠিন বাস্তবতা তাকে দাঁড় করায় অদ্ভুত এক সমীকরণের মুখোমুখি। যেখানে দাঁড়িয়ে মাসুদ আবিস্কার করেন, জীবনে আসলে টাকাটাই সব। বাকীসব মিথ্যে, মরীচিকা। এই রঙবদলের খেলায় মাসুদও বদলে যান। পরিকল্পনা সাজান, কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা কামানোর। হোক না সেটা অবৈধ পথে।
চিত্রনাট্যের কল্যানে সুড়ঙ্গ 'ওয়ান ম্যান শো' হয়নি। কিন্তু নিশো নিজের ভেলকি দেখিয়েছেন ক্ষণে ক্ষণে। চরিত্রের একেকটা লেয়ার নিয়ে খেলেছেন তিনি। কখনও অবুঝ প্রেমিক, কখনও দায়িত্ববান স্বামী, কখনও প্রেমিকার অবহেলায় কাতর, কখনও আবার আবেগের কাছে হার মেনে নেয়া এক যুবক। কখনও তিনি স্বপ্নাতুর যুবক, কখনও প্রতিশোধের নেশায় মরিয়া, কখনও আবার সর্বহারা একজন। কখনও তিনি পুলিশকে ঘোল খাইয়ে দিচ্ছেন, কখনও আবার ভালোবাসার মানুষের মিথ্যেকেও অবলীলায় বিশ্বাস করে নিচ্ছেন।
এই সবগুলো অবয়বকে নিশো খুব দারুণভাবে ধারণ করেছেন নিজের মধ্যে। আলাদা আলাদাভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন প্রতিটি ইমেজ। নিশো নিজের কথার মান রেখেছেন। ছোট থেকে বড় পর্দায় আগমন তার প্রতিভায় ছাপ ফেলতে পারেনি। নিজের কাজটা তিনি অসম্ভব মনোযোগ দিয়ে করেছেন। তার প্রমাণ তিনি রেখেছেন একেকটা দৃশ্যে। একটা দৃশ্যের কথা বলা যাক। মাসুদ প্রতিশোধ নিচ্ছেন। হল ভর্তি দর্শক চিৎকার করছেন তখন। সবাই নিশোর পক্ষে। পরক্ষণেই দেখা গেল, মাসুদ আসলে স্বপ্ন দেখছিলো এতক্ষণ। পুরো হলজুড়ে একটা হতাশার সুর শোনা গেল। দর্শককে তিনি এতটাই একাত্ম করে ফেলেছিলেন নিজের সাথে। নিজের অভিনয় দিয়ে।
প্রথম সিনেমা দিয়েই বড় পর্দায় সবশেষ এমন গ্র্যান্ড এন্ট্রি বাংলাদেশে বোধহয় সালমান শাহ পেয়েছিলেন। তারপর নিশো পেলেন। এবং সেটার মানও তিনি রাখলেন পুরোপুরি। নিশো মুগ্ধ করেছেন। নিশো মাতিয়ে রেখেছেন পুরোটা সময়জুড়ে। নিশো ক্ষণে ক্ষণে জানান দিয়েছেন, সুড়ঙ্গের এই গল্পটা আসলে তার জন্যেই লেখা হয়েছিল। 'মাসুদ' নামের চরিত্রটাও তার জন্যেই জন্ম হয়েছিল। এই নিশো সবকিছু জয় করতে এসেছেন। এই নিশো লম্বা সময় ধরে থাকতে এসেছেন!
নেগেটিভ দিক : আহামরি তেমন স্টোরি ছিল না। (মনপুরা, আয়নাবাজি টাইপ করতে পারে নাই)। অনেক বেশি এক্সপেক্টেশন নিয়ে গেলে মন খারাপ হতে পারে। কিন্তু অবশ্যই দেখার মত মুভি।
মুভিতে প্রথম দিকে ১৮+ সিন+ স্ল্যাং ব্যবহার করা হয়েছে । তাই পরিবার নিয়ে দেখার আগে একটু সচেতন থাকবেন।
একটা সিনের ভিডিও দিলাম যাতে বুঝতে পারেন Bgm আর উপস্থাপনাটা কত ভালো ছিল।
মুভি সম্পর্কে কমেন্ট করে জানাতে পারেন আপনার মতামত |