আসসালামু আলাইকুম। আমি বিগত অনেক দিন ধরেই দেখছি অনেকেরই অনেক প্রশ্ন টরেন্ট নিয়ে। তারপরও আমি আমার সল্প জ্ঞান দিয়ে কিছু প্রশ্নের জবাব দেওয়ার চেষ্টা করব আজকে।
টরেন্ট কি ? সিড ও লিচ কি | টরেন্ট কিভাবে কাজ করে |
টরেন্ট আসলে কি?
টরেন্ট হলো একধরনের ফাইল ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম। সহজ ভাবে বললে টরেন্ট হলো একটা মাধ্যম যার সাহায্যে কোন আপলোডার তার কম্পিউটার এর কোন ফাইল অন্য কারো সাথে শেয়ার করতে পারবেন। উদাহরন হিসেবে ধরেন কোন আপলোডার এর কম্পিউটার এ একটি মুভি আছে। এখন ঐ আপলোডার যদি কোন টরেন্ট সাইটে এই মুভিটা আপলোড করেন তাহলে ঐ টরেন্ট সাইটের ব্যাবহারকারীরা ঐ মুভিটা আপলোডারের কম্পিউটার থেকেই ডিরেক্ট ডাউনলোড করতে পারবে। এখানে কোন আপলোডার যখন কোন টরেন্ট সাইট এ মুভি আপলোড দিচ্ছেন তখন আসলে আপলোডার ডিরেক্ট মুভিটা পুরো আপলোড দিচ্ছেন না, যেমনটা আমরা গুগল ড্রাইভের ক্ষেত্রে করি। আপলোডার মুলত ঐ মুভি এর সাথে কানেক্টেড একটা টরেন্ট ফাইল (.tottent) ক্রিয়েট করে আপলোড দিচ্ছেন। আর যখন কোন ডাউনলোডার ঐ টরেন্ট টি ডাউনলোড দিতে চাবে, তখন তার কম্পিউটারে প্রথমে টরেন্ট ফাইল (.tottent) ফাইল টি ডাউনলোড হবে। এর পর ঐ ফাইলটি কোন টরেন্ট ক্লায়েন্ট (uTorrent, qBittorrent etc) এর মাধ্যমে আপলোডারের পিসি এর সাথে কানেক্টেড হবে এবং আপলোডারের পিসি থেকে সরাসরি মুভিটি ডাউনলোডারের পিসি তে ট্রান্সফার হয়ে যাবে।
টরেন্ট ক্লায়েন্ট কি?
একটু আগে উল্লেখ করা টরেন্ট ক্লায়েন্ট হলো এমন একটি সফটওয়্যার যার সাহায্যে আপনি টরেন্ট ফাইল গুলো ডাউনলোড করতে পারবেন কোন টরেন্ট সাইট থেকে। এই সফটওয়্যারটির মুল কাজ ই হলো আপলোডার এর পিসি এর সাথে ডাউনলোডার এর পিসি কে কানেক্ট করে ফাইল ডাউনলোড করানো।
টরেন্ট বিডি এর জন্য অবশ্যই "qBittorrent" এই টরেন্ট ক্লায়েন্টটি ব্যবহার করতে হবে।
Seeding কি?
একটু আগে বলেছিলাম যে আপলোডার আপলোড করলে ডাউনলোডার ডাউনলোড করতে পারে। কিন্তু যেহেতু টরেন্ট এর সিস্টেম টাই একটি ডিসেন্ট্রালাইজড সিস্টেম, মানে এর কোন নিজস্ব সার্ভার নেই যেখানে আপলোড কৃত সকল ফাইল (প্রকৃত ফাইল গুলো, টরেন্ট ফাইল না) মজুদ থাকবে। তাই আপলোডার এর পিসি ই এখানে অস্থায়ী সার্ভার এর মতো কাজ করে একটি নির্দিষ্ট ফাইল এর জন্য। তাই কোন ফাইল লম্বা সময় পর্যন্ত যেন ডাউনলোড করা যায়, তাই সকল ডাউনলোডার কে ঐ ফাইলটি সিড করতে হয়(কারণ কারো পিসিতেই যদি ফাইলটি না থাকে তাহলে নতুন ডাউনলোডার রা ডাউনলোড করতে পারবে না)। এখন এই সিড করা মানে কি? এর অর্থ হলো যখন কোন ডাউনলোডার একটি ফাইল ডাউনলোড করলো তখন তার পিসি তে ঐ ফাইলটি আছে, এখন নতুন কোন ডাউনলোডার যখন ঐ সেম ফাইলটি ডাউনলোড দিবে তখন পূর্বে ডাউনলোড কৃত মানুষটির পিসি থেকেও ঐ ফাইলটি আপলোড হতে থাকবে(এখানে কিছু শর্ত আছে, যা পরে আলোচনা করা হবে)। অনেক সময় সিডার আপলোড নাও পেতে পারে সেয়ার্ড আইপি ব্যাবহার করার কারনে, এটা নিয়ে পরবর্তিতে আলোচনা করব।
Seeding কিভাবে করবো?
একটু আগে বলেছিলাম যে ডাউনলোডার ফাইলটি ডাউনলোড এর পর তার পিসি থেকেও ফাইলটি আপলোড হতে থাকবে। কিন্তু এই কথাটি সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। শুধু যারা রিয়েল আইপি ব্যবহারকারী তারাই এই সুবিধা সব সময় পাবে। তাহলে কথা হলো সিড কিভাবে করবো?
খুবি সহজ, যেকোন ফাইল ডাউনলোড এর পরে ঐ ফাইলটি এর সাথে কোন ধরেনের মডিফিকেশন করবো না। অর্থাৎ কোন ফাইল ডাউনলোড এর পরে ঐ ফাইলটির নাম পরিবর্তন, ফাইল এর ফোল্ডার পরিবর্তন, ফাইলটি মুভ করে অন্য কথাও নিয়ে যাওয়া অথবা ফাইল এর সাথে কোন কিছু যুক্ত করা ইত্যাদি করা যাবে না। ফাইলটি যে ফোল্ডার এর ডাউনলোড হয়েছে ঐ ফোল্ডার এ ঐ ভাবে রেখে দিতে হবে অন্তত ৪৮ ঘন্টা। এই সময়ে ঐ ফাইল থেকে আপলোড পেতেও পারি নাও পারি, তবে ফাইলটি নিজে থেকেই সিড হতে থাকবে যতক্ষন পর্যন্ত পিসি অন থাকবে এবং নেট কানেকশন থাকবে। এ থেকে বুঝা যায় যে আপলোড এবং সিড সেম জিনিষ না।
টরেন্ট বিডি এর নিয়ম অনুযায়ী যেকোন ফাইল অন্তত ৪৮ ঘন্টা সিড করতে হবে, অন্যথায় H&R Flag(Hit and Run flag) খাবেন, যা পরবর্তিতে আপনাকে পেনাল্টি দিবে। তাই যত বেশি সময় পারেন সিড করাই শ্রেয়।
Leaching কি?
এতক্ষন ধরে যে বার বার ডাউনলোড করা বলতেছিলাম, টরেন্ট এর ভাষায় এটাকেই লিচিং বলে। লিচিং করার সময় আপনি রিয়েল আইপি ব্যবহারকারী সকল এর কাছ থেকে সম্মিলিত ভাবি ডাউনলোড স্পিড পাবেন। তার মানে কোন ফাইল এর যত বেশি সিডার তত বেশি স্পিড পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।৬।
FreeLeach Torrent কি?
কোন ব্যাবহারকারী যখন কোন ফাইল ডাউনলোড করে টরেন্ট সাইট থেকে তখন ঐ সাইটে একটা হিসাব রাখা হয় যে ঐ ব্যাবহারকারী কত জিবি ফাইল ডাউনলোড করেছে। এটা করা হয় সিড রেশিও হিসাব করার জন্য(এটা নিয়ে পরে আলোচনা করা হবে)। এখন টরেন্ট সাইট গুলোয় এমন কিছু ফাইল আপলোড হয় যেগুলোকে ফ্রিলিচ ট্যাগ দেওয়া হয়। এখন এই ফ্রিলিচ কি? ফ্রিলিচ টরেন্ট হলো সেই সব টরেন্ট ফাইল যেগুলো ডাউনলোড(লিচ) করলে আপনার ডাউনলোড এর কাউন্ট/পরিমান/হিসাব বাড়বে না। কিন্তু ঐ ফাইল থেকে আপনি যদি কোন আপলোড পান সেটা কাউন্ট হবে।
সহজ ভাবে বললে যে টরেন্ট গুলো ডাউনলোড করলে ডাউনলোড এর কাউন্ট বাড়ে না (অর্থাৎ সিড রেশিও কমবে না এই ফাইল এর কারণে) কিন্তু ঐ ফাইল থেকে আপলোড হলে ঠিকি আপলোড কাউন্ট বাড়বে তাকে ফ্রিলিচ টরেন্ট বলা হয়।
টরেন্ট বিডি তে যেই টরেন্ট ফাইল গুলোর সামনে সোনালী রঙ এর কয়েন এর মত লোগো 🪙 আছে ওগুলোই ফ্রিলিচ টরেন্ট।
ভালো ডাউনলোড স্পিড পেতে হলেঃ
- - বেশি সিডওয়ালা ও কম লিচওয়ালা টরেন্ট গুলো নামাবেন
- - টরেন্ট এর ভিতরে ঢুকে দেখবেন যে সোয়ার্ম স্পিড কতো। যত বেশি সোয়ার্ম স্পিড তত বেশি স্পিড পাবেন টরেন্টটি ডাউনলোড এর ক্ষেত্রে।
Seed Ratio কি?
সহজ ভাবে বললে আপনার আপলোড এবং ডাউনলোড এর অনুপাত। আপনি যদি আপনার টোটাল আপলোড কে টোটাল ডাউনলোড দ্বারা ভাগ দেন তাহলে আপনি আপনার সিড রেশিও পেয়ে যাবেন। ধরেন কারো ডাউনলোড এর পরিমান হলো ১০জিবি এবং আপলোড এর পরিমান হল ২০জিবি তাহলে তার সিড রেশিও হবে সিড রেশিও = আপলোড / ডাউনলোড = ২০ / ১০ = ২। সিড রেশিও অন্ত্যত ১ মেইনটেইন করা উচিত।
টরেন্ট বিডি এর নিয়ম অনুযায়ী সিড রেশিও ০.৫ এর নিচে নেমে গেলে আপনার ডাউনলোড করার সক্ষমতা চলে যাবে টরেন্ট বিডি থেকে।
Seed Bonus(SB) কি?
যখন আপনি কোন ফাইল ডাউনলোড করে সিড করতে থাকেন, তখন প্রত্যেক ঘন্টা সিড করার জন্য টরেন্ট বিডি আপনাকে একটি বোনাস পয়েন্ট উপহার দেয়। কত পরিমানে বোনাস পাবেন তা নির্ভর করে ফাইল এর সাইজ এবং কত সময় ধরে ফাইলটি আপলোড দিচ্ছেন তার উপরে। এই সিড বোনাস দিয়ে পরবর্তিতে আপনি আপলোড কিনতে পারবেন এবং আপনার আপলোড এর পরিমান ডাউনলোড অপেক্ষা কম হলে তা বাড়িয়ে নিয়ে সিড রেশিও বাড়াতে পারবেন।
Shared IP and Real IP এর কাহিনী কি?
সহজ ভাবে বললে যখন আপনার আইএসপি(ইন্টারনেট প্রদানকারী কম্পানি) আপনার জন্য আলাদা ভাবে ডেডিকেটেড কোন আইপি অ্যাড্রেস প্রদান করে, অর্থাৎ আপনাকে প্রদানকৃত নেট এর লাইনটি শুধু মাত্র আপনারই, তখন সেটাকে বলে রিয়েল আইপি অ্যাড্রেস। কিন্তু যখন একটি আইপি অ্যাড্রেস অনেকের মধ্যে শেয়ার করে দেওয়া হয়, অর্থাৎ একই নেট এর লাইন কয়েকজন ব্যবহারকারীর মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয় তখন সেটাকে শেয়ার্ড আইপি অ্যাড্রেস বলে।
এখন এগুলোর তাৎপর্য কি টরেন্টিং এর ক্ষেত্রে? সহজ ভাবে বললে কারো যদি রিয়েল আইপি অ্যাড্রেস থাকে তাহলে সে যে কোন আপলোডেড টরেন্ট ডাউনলোড করতে পারবেন যদি সিড থাকে এবং তার সকল সিড করা টরেন্ট থেকে আপলোড পাবেন যদি কেউ ঐ টরেন্ট গুলো ডাউনলোড করে। তাই এদের জন্য টরেন্টিং এর জগৎ অনেক সহজ হয়। অন্যদিকে যাদের শেয়ার্ড আইপি অ্যাড্রেস তারা তখনি কোন টরেন্ট ডাউনলোড করতে পারবে যখন ঐ টরেন্ট টা কোন রিয়েল আইপি অ্যাড্রেসধারী সিড করতেছে। আর তখনি কোন টরেন্ট সিড করে আপলোড পাবে যখন কোন রিয়েল আইপি অ্যাড্রেসধারী ঐ টরেন্টটি ডাউনলোড করবে। এক কথায় শেয়ার্ড আইপি অ্যাড্রেসধারীরা রিয়েল আইপি অ্যাড্রেসধারীদের উপর নির্ভরশীল।
কীভাবে সিড রেশিও মেইনটেইন করা যায়?
আমি ব্যাক্তিগত ভাবে কিছু উপায় বের করেছি এবং কিছু অভিজ্ঞ টরেন্ট ব্যাবহারকারীদের কাছ থেকে শিখেছি। আর এই টিপস গুলো শেয়ার্ড আইপি ব্যবহারকারীদের জন্যই বেশি দরকার। নিচে উপায় গুলো আলোচনা করছিঃ
- আপলোড করা শিখতে হবে (টরেন্ট আপলোড ট্যাব এ গেলেই সব রুলস সুন্দর ভাবে সাজানো আছে) এবং বেশি বেশি আপলোড করতে হবে।
- ১জিবি+ অনেক গুলো ফ্রিলিচ টরেন্ট ফাইল (১০০-২০০টার মতো) ডাউনলোড করে লম্বা সময় এর জন্য সিড করতে হবে। এতে করে অনেক বেশি সিড বোনাস পাওয়া যাবে এবং সেগুলো দিয়ে আপলোড কিনে রেশিও মেইনটেইন করা যাবে।
- যেকোন ফাইল ডাউনলোড এর আগে চেক করতে হবে যে ঐ ফাইল এর ফ্রিলিচওয়ালা টরেন্ট এভেইলএবল আছে কিনা সাইটে, এর পর ফ্রিলিচ টরেন্ট গুলো ডাউনলোড করতে হবে। এতে ডাউনলোড কাউন্ট বাড়বে না এবং রেশিও কমবে না।
- হেডলাইনে অর্থাৎ এক্সক্লুসিভ লিস্টে যে টরেন্ট গুলো উপড়ে শো হতে থাকে ওগুলো আপলোড হওয়ার সাথে সাথে ডাউনলোড করে সিড শুরু করতে হবে। ওগুলো যেহেতু উপড়ে সব সময় শো হতে থাকে তাই ওগুলো ডাউনলোড হবে অনেক বেশি এবং এর ফলে প্রথম দিকের সিডার হতে পারলে কিছু আপলোড পাওয়া যাবে। আর এক্সক্লুসিভ লিস্ট এর টরেন্ট বেশিরভাগ সময় ফ্রিলিচ হয় তাই ওগুলো ডাউনলোড করতে সমস্যা নাই।
বি দ্রঃ আমি তুলোনামূলক ভাবে নতুন এই টরেন্টিংএ। তাই আমার শেয়ারকৃত কোন তথ্য ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টতে দেখার অনুরোধ রইল। আর যেহেতু বাংলা সাধারনত লিখা হয় না, তাই বাংলার অনেক বানান ভুল হয়েছে আমি জানি এবং বাংলা সাজিয়েও লিখতে পারি না, তাই সকল ভুল শুধরিয়ে দিবেন আমি চেষ্টা করবো সাথে সাথে পোস্ট এ কারেকশন করে দেওয়ার।