চিনি শতাধিক রােগের কারণ
বলা হয়ে থাকে চিনি ক্যান্সারের খাবার । চিনি কম খেলে ক্যান্সার কোষের খাবার বন্ধ থাকে এবং দেহে রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা বাড়ে । তাইতাে বর্তমানে আমেরিকাতে ৪ মিলিয়নের বেশি ক্যান্সার রােগীকে চিকিৎসা হিসেবে কোনাে স্পেশাল থেরাপি দেয়া হয় না । শুধু বলা হয় , ভালাে খাবার খাও এবং চিনি ও কার্বোহাইড্রেট কম খাও । অর্থাৎ চিনি ও কার্বোহাইড্রেট সংবলিত খাবার না খেতে উৎসাহিত করা হয় সেখানে ।
অতি স্বচ্ছ - সাদা ও দানাদার যে উপাদানকে আমরা চিনি বলে জানি , তা আখ বা মিষ্টি বিট থেকে তৈরি অপ্রাকৃতিক বা রাসায়নিক উপাদান । কারখানায় রিফাইনিং করে আখের রস থেকে চিনি তৈরির সময় এর ভিটামিন , মিনারেল , প্রােটিন , এনজাইম এবং অন্যান্য উপকারী পুষ্টি উপাদান নষ্ট করে ফেলা হয় । ব্লিচিং ও সালফোনেশন পদ্ধতিতে চিনি রিফাইন করা হয় এবং সেখানে সালফার ব্যবহৃত হয় । সালফার একটি বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান ।
আমরা যখন চিনির তৈরি কোনাে খাবার গ্রহণ করি , তখন এ বিষাক্ত উপাদান আমাদের দেহে প্রবেশ করে ।
চা বা কফির সাথে চিনি খাওয়া আমাদের দৈনন্দিন অভ্যাস । কিন্তু আমরা জানি না যে চিনি স্বাস্থ্যের জন্য কত ক্ষতিকর । আইসক্রিম , কেক , পেস্টি , কার্বোনেটেড ড্রিঙ্কস , সফট ড্রিঙ্কস , এনার্জি ড্রিঙ্কস এবং প্রক্রিয়াজাত অনেক খাবারে প্রচুর পরিমাণে চিনি ব্যবহৃত হয় । বেশি মিষ্টিজাতীয় এসব খাবার দীর্ঘদিন খেলে মস্তিষ্কের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে । এতে স্মরণশক্তিও কমে যেতে পারে । ফল , শস্য , বাদাম এবং শাক - সক্তি থেকে আমরা দেহের জন্য প্রয়ােজনীয় মিষ্টি প্রাকৃতিকভাবেই পেয়ে থাকি , যা অনেকের অজানা । তাই অতিরিক্ত মিষ্টি হিসেবে রিফাইন্ড বা দানাদার চিনি গ্রহণ করার প্রয়ােজন নেই ।
বিভিন্ন রােগের জন্য সবসময় ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসকে দায়ী করা হয় , কিন্তু চিনিকে করা হয় না ; এর কারণ চিনির ক্ষতিকর প্রভাবগুলাে রাতারাতি চোখে পড়ে না । মনের তুলনায় বেশি মিষ্টি দেহের জন্য উপকারী না হয়ে বরং ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়় এবং দীর্ঘমেয়াদি নানা রােগ সৃষ্টি করে ।
যেমন
১ । দেহের রােগ - প্রতিরােধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় ।
২ । দৃষ্টিশক্তি নষ্ট করে ;
৩ । হাইপারএকটিভ , বদমেজাজী , অমনােযােগী করে তােলে ;
৪ । কোলেস্টেরল বাড়ায় এবং দেহ স্কুল করে ;
৫ । বিভিন্ন অঙ্গের কার্যাবলীর স্থায়িত্ব কমিয়ে দেয় ;
৬ । ক্যান্সার ও টিউমারের ঝুঁকি বাড়ায় ।
৭ । আলসার , এজমা , আর্থাইটিস , কিডনি ও পিত্তথলীর পাথর , গ্যাস্ট্রিক , হৃদরােগ , পাইলস , ডায়াবেটিস রােগ তৈরি করে ;
৮ । ব্রেনে অক্সিজেনের পরিমাণ কমিয়ে দেয় ।
৯ । অকালে বার্ধক্য আনে ।
এত ক্ষতির কারণ জেনে - শুনেও যদি চিনি খেতে বা ব্যবহার করতেই হয় , তাহলে সাদা চিনি না কিনে লাল চিনি তথা কম রিফাইন্ড চিনি কিনুন । লাল ও সাদা চিনির মূল্য কিন্তু আয় একই । চিনি , চাল , আটা কেনার ক্ষেত্রে মনে রাখবেন যেটি যত সাদা - স্বচ্ছ ও মসৃণ সেটি তত রিফাইন্ড , তত আঁশহীন , তত কৃত্রিম এবং ততই অস্বাস্থ্যকর ।
এভাবে সুস্থ চিন্তার বিবেকী আচার - আচরণে এবং সুস্বাস্থ্য লালনে ধীরে ধীরে অগ্রসর হােন ; প্রকৃত ও প্রাকৃত হােন ।
রেফারেন্স:
বই: সুস্থতা ও শতায়ু লাভে প্রাকৃতিক চর্চা ও চিকিৎসা
লেখক: এম হেলাল
প্রকাশক: ক্যাম্পাস পাবলিকেশন্স
সংস্করণ: নভেম্বর ২০১৪ , প্রথম প্রকাশ
পৃষ্ঠা: ১১৬