সন্তানের প্রতি পিতা মাতার কর্তব্য

পিতামাতা: সন্তানের জন্য সময়ের মূল্য

 সন্তানের জন্য সময় দেওয়া পিতা-মাতারা জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য মধ্যে একটি। এটি না মাত্র একটি দায়িত্ব, বরং একটি সাক্ষাত্কারের অংশ, একটি প্রেমের প্রতিপাদন, একটি শিক্ষাও, পরামর্শের এবং সমর্থনের স্তম্ভ। আমরা এই অত্যন্ত ব্যস্ত জীবনে সময়ের অনুদান বিশেষ করে সন্তানের জন্য সম্মানিত বান্ধবী এবং প্রেমিকাদের প্রতি দেয়ার চেষ্টা করি।

সন্তানের সাথে সময় কাটানো না মাত্র তাদের জন্য একটি উপভোগের অবস্থা সৃষ্টি করে, বরং তা তাদের উন্নতি ও শিক্ষার জন্য একটি প্রাধান্যমূলক উপায়। এটি তাদের বৃদ্ধি, আত্মবিশ্বাস, ও নৈতিকতা বিকাশে সাহায্য করে। তাদের সাথে সময় কাটানো তাদের একটি স্বাধীন ভাবে ভাবনা করতে এবং তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করে। এটি তাদের ব্যক্তিত্ব এবং চরিত্র গড়ে তোলার প্রধান উপায় হিসাবে কাজ করে।

parents

পিতা-মাতারা যেহেতু শিক্ষার প্রধান অধিকারী, তাদের জীবনে তাদের সন্তানের জন্য সময় বিনিয়োগ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা তাদের সন্তানের জীবনে একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব প্রদান করে এবং এটির সাথে সাথে তাদের আত্মবিশ্বাস এবং মেধা বৃদ্ধি হয়। সন্তানের জীবনে উত্তরণের জন্য তারা সঠিক দিকনির্দেশনা এবং উপদেশ প্রদান করে যা তাদের বৈকল্পিক পথ এবং গুরুত্বার্হ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহায্য করে।

প্রত্যেক পিতামাতা আশা করে যে তাদের সন্তান সন্তুষ্ট, সমৃদ্ধ, ও সাফল্য়ময় হবে। এই লক্ষ্যের প্রাপ্তির জন্য, তাদের সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটানো অবশ্যই প্রয়োজন

যতই কর্মব্যস্ত থাকুন , শিশু সন্তানকে সময় দিন । আন্তরিকতার সঙ্গে সময় দিন । ভালােবাসুন । মনে রাখবেন , শিশুও কিন্তু বােঝে — আপনার ভালােবাসা কতটা আন্তরিক। 

  গুরুত্বপূর্ণ কথা

  • রাত দুপুরে সন্তান কাশতে কাশতে বমি করছে । রাত - ঘুম ভেঙে যাওয়া অতি বিরক্ত আপনি সন্তানের পিঠে গুম - গুম কয়েক - ঘা বসিয়ে দিয়েছিলেন । এই তুচ্ছ ঘটনাটা আপনার মনে রাখার কথা নয় । ভুলে যাবেন । 
  • কিন্তু সন্তান কি প্রৌঢ়ত্বে পৌছেও ভুলতে পারবে ? পারবে না । বরং অবচেতন মনে আপনার প্রতি ক্ষোভ , বিতৃষ্ণা ও ঘৃণার ছাপ থেকেই যাবে ।
  • মা - বাবার অযত্নে অবহেলায় , ভালােবাসাহীনতায় কত যে সন্তান কৈশােরেই বখে যায় , নেশায় ডুবে থাকে — তার হাজার হাজার উদাহরণ মনােরােগ চিকিৎসকদের অভিজ্ঞতার ঝুলিতে আছে ।
  •   সন্তানের সামনে মা - বাবার ঝগড়া সন্তানের মনে তীব্র ভয় ও টেনশন তৈরি করে । মা - বাবার মধ্যে বিচ্ছেদ হবে বুঝলে অস্তিত্বহীনতার ভয় দেখা দেয় । মনে রাখবেন , আপনারা শিশুকে যতটা অবুঝ ভাবেন , শিশুরা তার চেয়ে বুঝদার ।
  •  আরও একটি সন্তান জন্মালে প্রথম সন্তানকে হঠাৎ করে কম সময় দিতে শুরু করবেন না । নতুন অতিথি মা - বাবার বেশি সময় বেশি ভালােবাসা নিলে মা - বাবার ভালােবাসা থেকে বঞ্চিত হবার ভয় থেকে টেনশন তৈরি হয় । শিশু নতুন অতিথিকে ঈর্ষা করতে শুরু করে ।
  •   সন্তানকে ভূত , ব্রহ্মদত্যি , জুজু ইত্যাদি অলীক বিষয় নিয়ে ভয় দেখাবেন না ভয় টেনশন তৈরি করে । বড় হয়েও দেখা যায় ভূতের ভয় কারও কারও মনে থেকেই যায় । 
  •   ভয় যেহেতু টেনশন তেরি করে , তাই পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে ’ ইত্যাদি মিথ্যে ভয়ও দেখাবেন না । 
  •   বাচ্চাকে শাস্তি দেওয়ার নামে মারধর করবেন না । আপনার কাছে শাস্তি পেতে পেতে এমন একটা সময় আসতে পারে , যখন আপনাকে দেখলেই টেনশন তৈরি হতে পারে , সিটিয়ে যেতে পারে স্বাভাবিক আচরণের যা পরিপন্থী । 
  • সন্তানের সঙ্গে এক বিছানায় শুয়ে মা - বাবা শারীরিক সম্পর্ক গড়তে যাবেন না । পরিণতিতে অনেক সময়ই দেখা যায় , সন্তান যৌনবিকৃতির শিকার হয়েছে । আপনার অজান্তেই সন্তান সব কিছু খেয়াল করতেই পারে । 
  • সন্তান স্কুলে টিচারের হাতে নির্যাতিত হচ্ছে কিনা জানেন ? নির্যাতন শারীরিক বা মানসিক অথবা দুই - ই হতে পারে । তেমন হলে সন্তানের স্কুলে যাওয়ার প্রতি । ভীতি দেখা দিতে পারে প্রয়ােজনে ওই টিচারের সঙ্গে যােগাযােগ করুন অথবা স্কুলের প্রধানকে সন্তানের সমস্যার কথা জানান । উটের মতাে বালিতে মুখ গুজে চোখ বন্ধ করে থাকলে সন্তানের সমস্যার সমাধান হবে না , এ - কথা মনে রাখবেন ।
  •   সহপাঠীর নির্যাতনের শিকার হয়েও সন্তান স্কুলে যাওয়ার নামে ভয় পেতে পারে । প্রয়ােজনে ক্লাস টিচারকে সমস্যার কথা জানান । সহপাঠীর গার্ডিয়ানের সঙ্গে কথা বলার প্রয়ােজন মনে করলে তাই বলুন । 
  •  কখনও বলবেন না , “ তােমার দ্বারা কিছু হবে না । ”
  •  সন্তানকে আঁকা , সাঁতার ,  , খেলা ইত্যাদি প্রচুর বিষয়ে শিখিয়ে ‘ চ্যাম্পিয়ন ' করে তুলবেন ভাবলে ভুল করবেন । এতে সন্তানের টেনশন বাড়বে । সব বিষয়ে মাস্টার হয়ে ওঠার বদলে আত্মবিশ্বাস ক্ষয়ে তলানিতে এসে ঠেকবে । সন্তানকে একটু বড় হতে দিন । যেদিকে স্বাভাবিক আগ্রহ সেদিকে এগিয়ে দিন ।
  • খেলাধুলা বা অন্যান্য বিনােদনের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকার আনন্দ উপভােগ করতে দিন ।
  • সন্তানকে ইদুর - দৌড় করিয়ে ক্লান্ত না করে ওদের সঙ্গে গল্প করুন , বেড়াতে যান । 
  •  মনে রাখবেন , সবার মেধা সমান হয় না । পড়াশুনােয় দারুণ কিছু না হয়েও পৃথিবী বিখ্যাত ব্যাক্তিত্বের সংখ্যা বিপুল।
  •   লেখা - পড়া নিয়ে আপনার অপূর্ণ ইচ্ছে সন্তানের উপর চাপিয়ে দিচ্ছেন তাে ?
  •   সন্তান কি লেখা - পড়াকে ভয় পাচ্ছে ? প্রয়ােজনে নিজেরা পড়াশােনাতে সাহায্য করুন । অথবা টিউটর রাখুন ।
  •  ওর কি হাসিখুশি , উচ্ছল ভাব ছিল ? তা কি বর্তমানে অনেকটাই ফিকে ? কিছুটা বিষগ্ন ? বন্ধুর মতাে মিশে সমস্যাটা কোথায় , বােঝার চেষ্টা করুন । প্রয়ােজনে মনােবিজ্ঞানীদের সাহায্য নিন । গােড়াতেই টেনশন দূর করতে ব্যবস্থা নিন ।
  •  যারা সন্তানকে মাদ্রাসায় পড়াবেন তারা চেষ্টা করুন অনাবাসিক মাদ্রাসায় দিতে। ওস্তাদ কে বলুন সন্তানকে শারীরিক ও মানসিক শাস্তি না দিতে।

একজন পিতা এবং মা তাদের সন্তানের জীবনের সকল প্রস্তুতি করে তুলতে তাদের প্রতি সময় দেওয়ার সাথে সাথে তাদের প্রেম এবং বিশ্বাস প্রদর্শন করেন।
পিতা-মাতারা তাদের সন্তানদের জীবনে উপস্থিতি বান্ধবে এবং সমর্থন প্রদানের মাধ্যমে তাদের সন্তানের বৃদ্ধি ও উন্নতি উন্নতি করতে পারে। তাদের সাথে সময় কাটানো তাদের জীবনের শিক্ষামূলক এবং রম্য দিক বেশী করে তুলে আনে।


সমগ্র দুনিয়া যেহেতু একটি ব্যাপক গ্লোবাল সমাজ হিসাবে পরিচিত, অতএব পিতা-মাতারা সন্তানের সাথে বেশী সময় কাটানোর মাধ্যমে সামাজিক মানসিকতা এবং পরিবেশ সম্পর্কে তাদের শিক্ষা প্রদান করতে পারেন। এটি তাদের একটি প্রজন্মের সাথে অভিযোগ বা যোগাযোগের ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং সামাজিক দক্ষতা তাদের সহযোগিতা এবং সমাধানের ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
সম্মানিত পিতা-মাতারা, সময় এবং প্রেম তাদের সন্তানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান এবং শিক্ষামূলক অভিজ্ঞতা তৈরি করে তুলে আনে। এটি না মাত্র তাদের সন্তানের জীবনের একটি অনন্য অংশ, বরং একটি অমূল্য সম্পদ। তাই পিতা-মাতারা যদি চান যে তাদের সন্তান সন্তুষ্ট, সমৃদ্ধ, ও সাফল্য়ময় হবে, তবে সময় এবং প্রেম তাদের সন্তানদের প্রতি অবিচ্ছিন্নভাবে দেওয়া উচিত।

About the author

Daud
Hey! I'm Daud, Currently Working in IT Company BD. I always like to learn something new and teach others.

Post a Comment

To avoid SPAM, all comments will be moderated before being displayed.
Don't share any personal or sensitive information.