কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

কিডনি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন অবস্থানে রক্তের সাথে প্রয়োজনীয় কাজ করে। কিডনির সঠিক কার্যক্ষমতা বজায় রাখা

আসসালামু আলাইকুম দাউদ বিডি ব্লগে আপনাকে স্বাগতম। আজকের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার ,কিডনী রোগের পরীক্ষাসমূহ ও কিডনি রোগের চিকিৎসা

kidney disease

কিডনি রোগ:

কিডনি রোগ হলো একটি মেডিকেল অবস্থা যেখানে কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাস হয়ে যায় এবং তার সামগ্রিক কার্যক্ষমতা কমে যায়। কিডনির কাজ হলো ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ, প্রোটিন, মিনারেল, এসিড এবং অন্যান্য পদার্থ বিনিময় করা, যা আমাদের শরীরের প্রচুর পরিমাণে ফোঁটার কাজ করে। কিডনি রোগ সাধারণত ধীরে ধীরে বা অসন্তোষজনকভাবে উঠে এবং সময় না করে সনাক্ত হলে গুরুতর হয়ে যেতে পারে।

কিডনির রোগের সহায়ক কারণগুলো অনেকগুলো হতে পারে, যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, পূর্ববর্তী পরিবারে কিডনির সমস্যা, ধূমপান, অতিরিক্ত পানি খাবার বা কিডনির সমস্যার জন্য কোনও ঔষধি ব্যবহার করা। এছাড়াও, প্রদত্ত অস্বাস্থ্যকর আহার বা খাবার খাওয়া, স্বাস্থ্যহানির অভ্যন্তরীণ প্রভাবের জন্য কিডনির কার্যক্ষমতা নষ্ট হতে পারে।

মানবদেহের জরুরি অঙ্গগুলির মধ্যে কিডনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের দেহে সাধারণত দুটি কিডনি থাকে যা রক্ত পরিষ্কার করার কাজ করে। কিডনি রক্তের মধ্যে থাকা বর্জ্য পদার্থগুলিকে আলাদা করে এবং মূত্রের মাধ্যমে এই বর্জ্যগুলি দেহ থেকে বাহির করে দেয়। এভাবে কিডনি দেহের জলভারসাম্য বজায় রাখার পাশাপাশি দূষিত পদার্থগুলি বাছাই করে বের করে দেয়।

সুস্থ ও সচেতন জীবনযাপনে কিডনির ভালো থাকা অপরিহার্য। বিভিন্ন রোগ ও সমস্যার কারণে কিডনি ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে, এমনকি অকার্যকর হয়ে পড়তে পারে। কিডনির রোগ প্রায়শই ‘নীরব ঘাতক’ হিসেবে পরিচিত এবং এর চিকিৎসা ব্যয়বহুল। বর্তমানে কিডনি রোগের প্রকোপ বেড়ে চলেছে। তবে, সচেতনতার মাধ্যমে কিডনি সুস্থ রাখা সম্ভব। এই আর্টিকেলে আমরা কিডনি সুস্থ রাখার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করব।

কিডনি রোগের লক্ষণ

নিম্নে কিডনি রোগের লক্ষণগুলি বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরা হলোঃ

১. শরীরে ফোলাভাব:

   – মুখমন্ডল, বিশেষ করে চোখের চারপাশে ফোলা দেখা দিতে পারে।

   – এই ফোলা পানি জমার ফলে হয়ে থাকে এবং কিডনি তার তরল নির্গমনের কাজ ঠিকমতো করতে না পারার ইঙ্গিত দেয়।

২. প্রস্রাবের পরিমাণ পরিবর্তন:

   – প্রস্রাবের পরিমাণ হঠাৎ কমে যাওয়া বা বৃদ্ধি পাওয়া।

   – এটি কিডনির ফিল্টারিং ক্ষমতার হ্রাসের লক্ষণ।

৩. রক্তযুক্ত প্রস্রাব:

   – প্রস্রাবে রক্ত যাওয়া বা প্রস্রাবের রঙ লাল হওয়া।

   – এটি কিডনির অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণের ইঙ্গিত দেয়।

৪. কোমর ও তলপেটে ব্যথা:

   – কোমরের দুই পাশে বা তলপেটে ব্যথা হতে পারে।

   – এই ব্যথা কিডনির সমস্যা বা পাথরের ইঙ্গিত হতে পারে।

৫. উচ্চ রক্তচাপ:

   – কিডনি রোগের ফলে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে।

   – কিডনি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, এবং কিডনির সমস্যা হলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়।

অতিরিক্তভাবে,

কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে কিডনি রোগের ঝুঁকি বেশি থাকে। যেমন:

১। ডায়াবেটিস রোগীদের:

  – ডায়াবেটিস কিডনির ক্ষতির একটি প্রধান কারণ।

– উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের:

  – উচ্চ রক্তচাপ কিডনির ক্ষতি ঘটাতে পারে।

২। পারিবারিক ইতিহাস:

  – পরিবারে যদি কারো কিডনি সমস্যার পূর্ব ইতিহাস থাকে তাহলে কিডনি রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি থাকে।

৩। অতিরিক্ত ওজন:

  – শরীরের অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা কিডনিতে চাপ বাড়ায়।

৪। দীর্ঘমেয়াদী ব্যথার ওষুধ গ্রহণ:

  – কিছু ব্যথা নিবারক ওষুধ কিডনিতে ক্ষতি করতে পারে।

৫। কম পানি পান:

  – পর্যাপ্ত পানি না পান করলে কিডনির ক্ষতি হতে পারে।

এসব কারণে বছরে অন্তত দুইবার কিডনি পরীক্ষা করানো উচিত, বিশেষ করে যাদের উপরে উল্লিখিত লক্ষণগুলো রয়েছে।

কিডনী রোগের পরীক্ষাসমূহ

কিডনি রোগ নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা ও পরীক্ষণ পদ্ধতি রয়েছে। এগুলি কিডনির কার্যক্ষমতা এবং ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে সাহায্য করে। কিডনি রোগের পরীক্ষাসমূহের মধ্যে রয়েছে:

১. ব্লাড টেস্টসমূহ:

   – সিরাম ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা: এটি রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা পরিমাপ করে, যা কিডনির ফাংশনের একটি ইন্ডিকেটর।

   – ব্লাড ইউরিয়া নাইট্রোজেন (BUN): এটি রক্তে ইউরিয়া নাইট্রোজেনের মাত্রা পরিমাপ করে।

   – eGFR (Estimated Glomerular Filtration Rate): এটি কিডনির ফিল্টারিং ক্ষমতার একটি অনুমান দেয়।

২. ইউরিন টেস্টসমূহ:

   – ইউরিন অ্যানালিসিস: এটি প্রস্রাবে প্রোটিন, রক্ত, এবং অন্যান্য উপাদানের উপস্থিতি পরীক্ষা করে।

   – মাইক্রোঅ্যালবুমিনুরিয়া: প্রস্রাবে মাইক্রোস্কোপিক প্রোটিন (অ্যালবুমিন) এর পরিমাণ পরীক্ষা।

৩. ইমেজিং টেস্টসমূহ:

   – আল্ট্রাসাউন্ড: কিডনির আকার, অবস্থান এবং স্ট্রাকচার পরীক্ষা করে।

   – CT স্ক্যান: কিডনি এবং প্রস্রাব পথের আরও বিস্তারিত চিত্র প্রদান করে।

৪. বায়োপসি:

   – কিডনির একটি ছোট টিস্যু স্যাম্পল নিয়ে তা পরীক্ষা করা হয় যাতে কিডনির ক্ষতির ধরণ এবং কারণ নির্ধারণ করা যায়।

৫. ডায়ালিসিস এফিসিয়েন্সি পরীক্ষা:

   – যদি রোগী ডায়ালিসিসে থাকে, তাহলে ডায়ালিসিসের কার্যকারিতা মূল্যায়ন করা হয়।

এই পরীক্ষাগুলি কিডনি রোগের ডায়াগনসিস, মনিটরিং এবং চিকিৎসা পরিকল্পনার জন্য অত্যন্ত জরুরি। নিয়মিত চিকিৎসার অংশ হিসেবে এগুলি সময়মতো সম্পন্ন করা উচিত।

কিডনি রোগের চিকিৎসা

কিডনি রোগের চিকিৎসা সাধারণত রোগের পর্যায়, কারণ এবং রোগীর সামগ্রিক স্বাস্থ্যগত অবস্থা অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। নিম্নোক্ত পদ্ধতিগুলি কিডনি রোগের চিকিৎসায় প্রচলিত:

১. জীবনযাত্রার পরিবর্তন:

   – স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা।

   – নিয়মিত ব্যায়াম করা।

   – ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।

   – ধূমপান ও অতিরিক্ত মদ্যপান এড়ানো।

২. ওষুধ প্রয়োগ:

ওষুধ অবশ্যই একজন কিডনি বিশেষজ্ঞ চকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে

   – উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ওষুধ।

   – কিডনির চাপ হ্রাস করতে ডায়ুরেটিক্স (পানি নিষ্কাশন বৃদ্ধিকারী ওষুধ)।

   – এসিই ইনহিবিটরস বা এআরবি ওষুধ, যা কিডনির ক্ষতি কমাতে সাহায্য করে।

   – প্রোটিনুরিয়া কমানোর জন্য ওষুধ।

৩. ডায়ালিসিস:

   – কিডনি ফেইল হলে রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ এবং অতিরিক্ত তরল পরিষ্কার করার জন্য ডায়ালিসিস করা বাধ্যতামূলক।

   – ডায়ালিসিস প্রধানত দুই প্রকার। হেমোডায়ালিসিস এবং পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস।

৪. কিডনি প্রতিস্থাপন:

   – গুরুতর কিডনি ফেইলর এর ক্ষেত্রে কিডনি প্রতিস্থাপনের করা লাগতে পারে।

   – স্বাস্থ্যকর ডোনার থেকে কিডনি প্রাপ্তি এবং সার্জিক্যাল প্রতিস্থাপন।

৫. অন্যান্য থেরাপি:

   – কিডনি সম্পর্কিত অন্যান্য জটিলতার জন্য বিভিন্ন থেরাপি।

   – রক্তে মিনারেল এবং ইলেকট্রোলাইটের সামঞ্জস্য বজায় রাখা।

কিডনি রোগের চিকিৎসা অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী হওয়া উচিত। নিয়মিত চেক-আপ এবং উপযুক্ত প্রতিরোধ পদ্ধতি অনুসরণ করে কিডনি রোগের লক্ষণ ও মাত্রা কমানো সম্ভব।

কিডনী রোগের প্রতিকার

কিডনি রোগের প্রতিকার বা প্রতিরোধের জন্য নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ:

১. স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা অনুসরণ:

   – স্বাস্থ্যকর ও ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা।

   – নিয়মিত ব্যায়াম এবং সক্রিয় থাকা।

   – শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।

২. অতিরিক্ত লবণ ও চিনি এড়িয়ে চলা:

   – খাদ্যে লবণের পরিমাণ কমানো।

   – চিনি ও উচ্চ গ্লাইসেমিক খাদ্যাদি এড়ানো।

৩. পানি পানের পর্যাপ্ততা:

   – প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা।

   – ডিহাইড্রেশন এড়ানো।

৪. ধূমপান এবং অতিরিক্ত মদ্যপান পরিহার:

   – ধূমপান বন্ধ করা।

   – অতিরিক্ত মদ্যপান এড়িয়ে চলা।

৫. নিয়মিত পরীক্ষা-নীরিক্ষা করা ও চিকিৎসা নেয়া:

   – উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা।

   – নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং কিডনি ফাংশন টেস্ট করানো।

৬. ওষুধের সঠিক ব্যবহার:

   – নির্ধারিত ওষুধ নিয়মিত ও সঠিক ডোজে গ্রহণ করা।

   – অতিরিক্ত ব্যথানাশক ও অন্যান্য ওষুধ ব্যবহারে সতর্ক থাকা।

কিডনি রোগের প্রতিরোধে এই পদক্ষেপগুলি অত্যন্ত কার্যকরী হতে পারে। যে কোনো স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যা বা উপসর্গ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

সবশেষে, আমাদের জীবনের বিভিন্ন দিকে কিডনি রোগের লক্ষণ প্রকাশিত হতে পারে এবং তা অতি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা হিসাবে প্রতিফলিত হতে পারে। তাই আমাদের কর্তব্য হলো নিজের স্বাস্থ্যের সাথে সচেতন থাকা এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নিতে। একটি সুস্থ ও সন্তুষ্ট জীবন প্রতিশ্রুতিতে কিডনি স্বাস্থ্য মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ।

About the author

Daud
Hey! I'm Daud, Currently Working in IT Company BD. I always like to learn something new and teach others.

Post a Comment

To avoid SPAM, all comments will be moderated before being displayed.
Don't share any personal or sensitive information.