চলচ্চিত্র সমালোচনা: আমলনামা
ফেরেশতা-লিখিত কাজের বয়ান, না সিস্টেমের সেবাদাসদের কর্মফল?
জীবনানন্দ দাশ লিখেছিলেন—
“ঘড়ির দুইটি ছোটো কালো হাত ধীরে/ আমাদের দু’জনকে নিতে চায় সেই শব্দহীন মাটি ঘাসে/ সাহস সংকল্প প্রেম আমাদের কোনোদিন সেদিকে যাবে না/ তবুও পায়ের চিহ্ন সেদিকেই চলে যায়/ কী গভীর সহজ অভ্যাসে।”
পরিচালক রায়হান রাফীও সহজ অভ্যাসেই তাঁর সিনেমার গল্পকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে চলে যান। কিন্তু জীবনের অর্ধেক আলো হলে বাকি অর্ধেক অন্ধকার। সেই অন্ধকারের গল্প ভালো না লাগলেও কান বন্ধ করে রাখার উপায় নেই।

‘আমলনামা’ – বিচারহীনতার ভয়াবহ চিত্রায়ণ
‘আমলনামা’ সিনেমায় রায়হান রাফী বিচার-বহির্ভূত হত্যার অন্ধকারের ভেতর দিয়ে আমাদের নিয়ে গেছেন। আমাদের সৌভাগ্যবান জীবন যেসব দুর্ভাগ্যের শিকার হয়নি, আর হয়নি বলেই তাকে অগ্রাহ্য করেছি, সেই দুর্ভাগ্যের গভীরে আমাদের নামিয়ে দিয়েছেন এই নির্মাতা।
বিচারহীনতা কেমন হতে পারে? ক্ষমতা যেখানে মানুষকে অপরাধী বানিয়ে দেয় এবং অপরাধীকে নায়ক করে তোলে। রাষ্ট্রযন্ত্র যেখানে নিরপরাধ মানুষকে অপহরণ, নির্যাতন ও হত্যার যন্ত্রে পরিণত হয়। এসবই তুলে ধরা হয়েছে ‘আমলনামা’-তে।
অভিনয়ের শক্তি – চরিত্রগুলো জীবন্ত
এই সিনেমায় অভিনয়ের দিক থেকে ত্রুটিহীন পারফরম্যান্স দিয়েছেন শিল্পীরা।
- ইমরান চরিত্রে – জাহিদ হাসান, দুর্দান্ত অভিনয়
- পারভীন চরিত্রে – তমা মির্জা, অনবদ্য
- হাসান চরিত্রে – কামরুজ্জামান কামু, হৃদয়ছোঁয়া
- আজিজ চরিত্রে – গাজী রাকায়েত, অসাধারণ
- ইমরানের স্ত্রীর চরিত্রে – সারিকা সাবরিন, এ যাবৎকালের সেরা অভিনয়
- হাসানের বড় মেয়ে – জান্নাতুল মাওয়া ঝিলিক, মনে রাখার মতো পারফরম্যান্স
সিনেমার আবহসংগীত, ক্যামেরার কাজ ও চিত্রনাট্য
সুমন সরকারের ক্যামেরার কাজ ছিল চমৎকার। প্রতিটি ফ্রেম ছিল নিখুঁতভাবে সাজানো। সীমিত রায় অন্তরের সম্পাদনা যথাযথ এবং নিখুঁত ছিল। আরাফাত মোহসীন নিধির সঙ্গীত আবেগকে আরও গাঢ় করেছে।
‘আমলনামা’র শক্তিশালী বার্তা
‘আমলনামা’ আসলে সেই নথি, যেখানে ফেরেশতা কিরামান-কাতবিন মানুষের কর্মের বিবরণ লিখে রাখেন। কিন্তু সিনেমার মাধ্যমে রায়হান রাফী দেখিয়েছেন, কর্মফল জীবনে আরও দ্রুত আসে – অনেক সময় পাপের মূল্য দিতে হয় নিষ্পাপের জীবন দিয়েই।
শেষকথা – এই সিনেমা দেখা উচিত কেন?
‘আমলনামা’ শুধু একটি সিনেমা নয়, এটি একটি প্রতিবাদ। এটি বিচারহীনতার গল্প বলা একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। সিনেমাটি দেখতে বসার আগে একটু সাহস নিয়ে বসতে হবে, কারণ এটি হৃদয়ে গভীর ক্ষত তৈরি করবে।
আমরা যেন বিচারহীনতার সমর্থক না হই, আমাদের আমলনামায় যেন নীরবতা ও অন্যায়ের দায় না থাকে!
যারা এখনও দেখেননি, আজই ‘আমলনামা’ দেখে নিন চরকিতে!
📢 আপনার মতামত দিন!
আপনি কি ‘আমলনামা’ দেখেছেন? কেমন লেগেছে? আপনার মতামত কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না!
শেয়ার করুন – অন্যদের জানাতে ভুলবেন না!