আপনার বা আপনার শিশুর জন্য নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে চাইলে, এখানে জেনে নিন নতুন নিয়মে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার সহজ পদ্ধতি। বর্তমানে BDRIS ওয়েব সাইটের মাধ্যমে ঘরে বসে নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন করা যায়।

জন্ম নিবন্ধন (Birth Certificate) একজন বাংলাদেশী শিশু/নাগরিকের মৌলিক অধিকার। রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নাগরিকত্বের মর্যাদা পেতে এবং সকল সরকারি, বেসরকারি ও প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে জন্ম সনদ থাকা বাধ্যতামূলক। এই সনদের আলোকেই একজন ব্যক্তি বা শিশুর নাম, বয়স ও জাতীয়তার স্বীকৃতি পায়।
একটি শিশুর স্কুলে ভর্তি, ভোটার আইডি কার্ড ও পাসপোর্ট করতে এবং সকল রাষ্ট্রীয় সুবিধার জন্য এটি অপরিহার্য। বর্তমানে একটি শিশুর জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক। তবে সুবিধা হলো দেশের যেকোন নাগরিক নিজের হাতে থাকা মোবাইল দিয়ে অনলাইনে জন্ম সনদের জন্য আবেদন করতে পারবে। তাই ঘরে বসে নিজে নিজে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার বিস্তারিত প্রক্রিয়াটি জেনে নিন এই লেখা থেকে।
নতুন জন্ম নিবন্ধনের আবেদন
জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার জন্য, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন ওয়েবসাইটের আবেদন পেজে ভিজিট করুন। তারপর নিবন্ধনের ঠিকানা নির্বাচন করে নিবন্ধনকারী ব্যক্তির পরিচিতি, জন্মস্থানের ঠিকানা, পিতা মাতার তথ্য, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানার তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করুন। তারপর আবেদনকারীর প্রত্যয়ন/তথ্য দিয়ে নিবন্ধনের স্বপক্ষে উপযুক্ত প্রমাণাদি সংযোজন করুন। সর্বশেষ আবেদনটি রিভিউ করে একটি সচল মোবাইল নাম্বারে ওটিপি ভেরিফাই করুন এবং আবেদন সাবমিট করুন।
আবেদনের সাবমিটের পর এপ্লিকেশন আইডি এবং আবেদনের কপি প্রিন্ট করে সংরক্ষণ করুন। পরবর্তীতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভায় সেই আবেদনের কপি দিয়ে ও জন্ম নিবন্ধন এর ফি পরিশোধ করে জন্ম নিবন্ধন করতে পারবেন। কিন্তু আপনার যদি জন্ম নিবন্ধন থেকে থাকে এবং সেটিতে ভুল থাকার কারণে নতুন আরেকটি আবেদন করতে চান, তা হলে এটি করা ঠিক হবে না। বরং আপনার পূর্বের জন্ম নিবন্ধনটি সংশোধন এর জন্য আবেদন করতে পারেন।
নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদনের পূর্বে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়
সাধারণভাবে একটি শিশুর জন্ম নিবন্ধন করতে জটিলতা কম। তবে একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধন আবেদনের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় বিশেষভাবে বিবেচনায় রাখতে হয়। যেমন:
- একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির পূর্বে কোন জন্ম নিবন্ধন অনলাইনে রয়েছে কি-না, তা নিশ্চিত করতে হবে। অনেকেরই পুরাতন হাতে লেখা জন্ম নিবন্ধন থাকে, যা নিবন্ধন কার্যালয়ের ডাটাবেজে/ অনলাইনে সাবমিট করা আছে। এক্ষেত্রে আপনার সন্দেহ থাকলে, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য কেন্দ্র থেকে পূর্বে নিবন্ধন আছে কি-না, তা যাচাই করতে পারবেন।
- অনলাইনে একাধিক জন্ম নিবন্ধন থাকলে এবং পূর্বের জন্ম নিবন্ধনের তথ্য সঠিক না হলে, তা উপযুক্ত প্রমাণ দিয়ে বাতিল করতে হবে। তবে রেজিস্টার জেনারেলের কার্যালয় ছাড়া জন্ম নিবন্ধন বাতিল করা সম্ভব হয় না।
- আবেদনের সময় নিবন্ধনকারী ব্যক্তি, পিতা-মাতা এবং ঠিকানার সকল তথ্য সঠিক হয়েছে কি-না, তা নিশ্চিত হয়ে সাবমিট করতে হবে।
দ্বৈতভাবে একাধিক জন্ম সনদের আবেদন করা দণ্ডনীয় অপরাধ। মনে রাখবেন, জন্ম নিবন্ধন সম্পর্কে জালিয়াতি করলে প্রশাসনিকভাবে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রনয়ণ করা হবে। ‘জন্ম নিবন্ধন আইন’- এর বিধান অনুযায়ী, বিধি লংঘনকারী নিবন্ধক বা ব্যক্তি অনধিক ৫০০ টাকা, অথবা অনধিক ২ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ডে কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে।
নতুন জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করার নিয়ম
নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার জন্য bdris.gov.bd/br/application ভিজিট করে জন্ম নিবন্ধনের ঠিকানা, ব্যক্তিগত তথ্য, জন্ম স্থানের ঠিকানা এবং পিতা মাতার তথ্য দিয়ে জন্ম নিবন্ধনের আবেদন ফরম ফিলাপ করতে হবে। আবেদন সাবমিট করার পর ইউনিয়ন সচিব সেটি যাচাই বাছাই করে অনুমোদন দিলে অফিসে গিয়ে অথবা অনলাইন থেকে জন্ম নিবন্ধন সনদ ডাউনলোড করতে পারবেন।
২০০৪ সাল থেকে বাংলাদেশে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন প্রণীত হয়েছে। পরবর্তীতে, জনগণের সুবিধার জন্য এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে ১ জুলাই ২০১১ তারিখ থেকে নতুন জন্ম নিবন্ধন তৈরির আবেদন প্রক্রিয়া অনলাইন ভিত্তিক করা হয়েছে। তাই এখন নিজে নিজেই মোবাইল বা কম্পিউটার দিয়ে অনলাইনে আবেদন করা যায়।
জন্ম নিবন্ধন আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র গুলো আবেদন শুরুর পূর্বেই স্ক্যান করে/ছবি তুলে আপনার ডিভাইসে সংরক্ষণ করুন। সকল কাগজপত্র থাকলে আবেদন করার জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন-
ধাপ ১: Bdris ওয়েবসাইটে প্রবেশ
নতুন জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করার জন্য রেজিস্টার জেনারেল কার্যালয়ের, স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন ওয়েব সাইটে প্রবেশ করতে হবে। নিরাপত্তা জোরদার করতে জন্ম নিবন্ধন ওয়েবসাইটের ওয়েব পেজ পরিবর্তন করা হয়েছে। নতুন আপডেটেড ওয়েবপেজে সরাসরি প্রবেশ করার জন্য, ভিজিট করুন- bdris.gov.bd/br/application
ধাপ ২: জন্ম নিবন্ধনের জন্য ঠিকানা নির্বাচন
‘জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন’ -এই ওয়েবপেইজে ভিজিট করার পর, আবেদন শুরুর জন্য নিবন্ধনের ঠিকানা নির্বাচন করতে হবে। নিবন্ধনকারী ব্যক্তি তার কোন ঠিকানায় (জন্মস্থান/স্থায়ী ঠিকানা/বিদেশে বাংলাদেশী দূতাবাস) জন্ম সনদ করতে চান, তা সিলেক্ট করে ‘পরবর্তী’ লেখাতে ক্লিক করতে হবে।

ধাপ ৩: নিবন্ধনকারী ব্যক্তির পরিচিতি ও জন্মস্থানের ঠিকানা
এই ধাপে, নিবন্ধনকারী ব্যক্তির প্রাথমিক পরিচিতির তথ্যগুলো দিতে হবে। যেমন:
- নিবন্ধনকারী ব্যক্তির নামের প্রথম অংশ ও শেষ অংশ বাংলায় (নামের একটিমাত্র অংশ থাকলে শেষের অংশে লিখতে হবে);
- নিবন্ধনকারী ব্যক্তির নামের প্রথম অংশ ও শেষ অংশ ইংরেজিতে (একটি মাত্র অংশ হলে শেষের অংশে লিখতে হবে);
- নিবন্ধনকারীর জন্ম তারিখ নির্বাচন;
- পিতা মাতার কততম সন্তান;
- নিবন্ধনকারীর লিঙ্গ ইত্যাদি তথ্য দিতে হবে।
জন্ম তারিখের তথ্য সাবমিট করার পর, আপনার কাছে এ সকল তথ্যের ডকুমেন্ট আছে কিনা জিজ্ঞেস করা হবে। সেখানে, ‘হ্যাঁ’ সিলেক্ট করুন।

জন্মস্থানের ঠিকানা
আপনি আবেদনের শুরুতে নিবন্ধনের ঠিকানা হিসেবে জন্মস্থান/স্থায়ী ঠিকানা/বিদেশে বাংলাদেশী দূতাবাস – যেটি সিলেক্ট করবেন তার তথ্য এই ধাপে পূরণ করতে হবে। এখানে ধারাবাহিকভাবে নিবন্ধনকারীর-

- দেশ
- বিভাগ
- জেলা
- উপজেলা
- ইউনিয়ন পরিষদ/সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা
- ওয়ার্ড নম্বর
- ডাকঘর (পোস্টকোড সহ, বাংলা ও ইংরেজিতে)
- গ্রাম/পাড়া/মহল্লা (বাংলা ও ইংরেজিতে)
- বাসা ও সড়ক (বাংলা ও ইংরেজিতে) পূরণ করতে হবে।
উল্লেখ্য যে, লাল (*) চিহ্নিত তথ্যগুলো অবশ্যই পূরণ করতে হবে। সকল তথ্যপূরণ সম্পন্ন হলে ‘পরবর্তী’ বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৪: নিবন্ধনকারীর পিতা-মাতার তথ্য পূরণ
এখানে, নিবন্ধনকারী ব্যক্তি বা শিশুর পিতা-মাতার তথ্য পূরণ করুন। প্রথমে পিতার তথ্যে-
- পিতার জন্ম নিবন্ধন নম্বর (বর্তমানে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে);
- পিতার জন্ম তারিখ (অনলাইন জন্ম নিবন্ধন/ভোটার আইডি কার্ড অনুযায়ী);
- পিতার নাম বাংলায় ও ইংরেজিতে;
- পিতার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর (যদি থাকে);
- পিতার জাতীয়তা নির্বাচন করুন।
একইভাবে, মাতার তথ্যপূরণের ক্ষেত্রেও-
- মাতার জন্ম নিবন্ধন নম্বর;
- মাতার জন্ম তারিখ;
- মাতার নাম বাংলায় ও ইংরেজিতে;
- মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর (যদি থাকে);
- মাতার জাতীয়তা নির্বাচন করুন।

সকল তথ্যপূরণ সম্পন্ন হলে ‘পরবর্তী’ বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৫: স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানার তথ্য পূরণ
এই ধাপে, নিবন্ধনকারী ব্যক্তির স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানার তথ্য পূরণ করতে হবে।
স্থায়ী ঠিকানা:
আপনার জন্মস্থানের ঠিকানায় নিবন্ধনের আবেদন করলে এবং তা স্থায়ী ঠিকানার অনুরূপ হলে, ‘জন্মস্থানের ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা একই’ -এই লেখার পাশে চেকবক্সে ক্লিক করুন। তাহলে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে সকল তথ্য পূরণ হয়ে যাবে।
স্থায়ী ঠিকানা ভিন্ন হলে, ধারাবাহিকভাবে নিম্নোক্ত তথ্যগুলো পূরণ করুন:
- দেশ;
- বিভাগ;
- জেলা;
- উপজেলা;
- ইউনিয়ন পরিষদ/সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা;
- ওয়ার্ড নম্বর;
- ডাকঘর (পোস্টকোড সহ, বাংলা ও ইংরেজিতে);
- গ্রাম/পাড়া/মহল্লা (বাংলা ও ইংরেজিতে);
- বাসা ও সড়ক (বাংলা ও ইংরেজিতে) পূরণ করতে হবে।
এখানে লাল (*) চিহ্নিত ক্ষেত্রগুলো অবশ্যই পূরণ করতে হবে।

বর্তমান ঠিকানা:
বর্তমান ঠিকানা স্থায়ী ঠিকানার অনুরূপ হলে, ‘স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানা একই’ – এই লেখার পাশে চেকবক্সে ক্লিক করুন। বর্তমান ঠিকানা ভিন্ন হলে, উপরের নিয়মে একইভাবে সকল তথ্যগুলো পূরণ করুন।

সকল তথ্যপূরণ সম্পন্ন হলে ‘পরবর্তী’ বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৬: আবেদনকারীর প্রত্যয়ন
এই ধাপে, যিনি জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করছেন, তার প্রত্যয়নবাচক তথ্য দিতে হবে। নিবন্ধনাধীন ব্যক্তি বছরের নিম্নে বয়স্ক হলে তার পিতা/মাতা/আইনানুগ অভিভাবক বা বিধি-৯ মতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির প্রত্যয়ন করতে হবে। আবেদনকারীর প্রত্যয়নের স্বপক্ষে উপযুক্ত প্রমাণপত্রের ছবি সংযুক্ত করতে হবে। এছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা কার্যালয়ে জমা দিতে হতে পারে (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।
আবেদনের ওয়েবপেইজে-
- নিবন্ধনকারী ব্যক্তির সাথে আবেদনকারী ব্যক্তির সম্পর্ক- পিতা/ মাতা/ দাদা/ দাদি/ নানা/অভিভাবক বা অন্যান্য সিলেক্ট করতে হবে। (নিবন্ধনকারী ব্যক্তির বয়স ১৮’র বেশি হলে এবং নিজে আবেদন করলে ‘নিজ’ সিলেক্ট করুন)।
- আবেদনকারীর নাম লিখুন। (আবেদনকারী পিতা/ মাতা/ নিজে হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পূরণ হয়ে যাবে)।

ধাপ ৭: প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সংযোজন
আবেদনের প্রমাণপত্র হিসেবে, টিকা কার্ড/ হাসপাতালের ছাড়পত্র এবং হাল সনের হোল্ডিং ট্যাক্স রশিদের স্ক্যান কপি সংযোজন করতে হবে। প্রতিটি সংযোজিত ফাইলের ফাইল সাইজ 100KB এর কম হতে হবে।
ফাইল সংযোজন করার জন্য-
- ওয়েবপেজ থেকে ‘+সংযোজন’ বাটনে ক্লিক করুন।
- তারপর আপনার মোবাইল বা কম্পিউটারের ফাইল থেকে সেই সংযুক্তির ফাইলটি সিলেক্ট করুন।
- এবার ওয়েবপেজ থেকে ‘File type’ সিলেট করে ‘Start’ বাটনে ক্লিক করুন।
- প্রয়োজনীয় ফাইলগুলোর সংযোজন সম্পন্ন করার পর, ‘পরবর্তী’ বাটনে ক্লিক করুন।

ধাপ ৮: আবেদনের তথ্য রিভিউ
সকল তথ্য পূরণের পর আবেদনপত্রটির রিভিউয়ের জন্য ওয়েবপেজে দেখানো হবে। আবেদন পত্রটি সাবমিট করার পূর্বে সকল তথ্য ঠিক আছে কি-না, তা দেখে নিন এবং আবেদনকারীকে দেখান। এক্ষেত্রে সকল তথ্য ভালোভাবে যাচাই করতে হবে, কারণ সাবমিট করা হয়ে গেলে আবেদনপত্রটিতে আর এডিট করার সুযোগ থাকবে না।

ধাপ ৯: ওটিপি ভেরিফিকেশন ও আবেদন সাবমিট
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন ওয়েবসাইটের সর্বশেষ আপডেটের পর, নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরাসরি ওটিপি ভেরিফিকেশন প্রসেস যুক্ত করা হয়েছে। আবেদন পত্র রিভিউ করার পর, নিবন্ধনকারী/ আবেদনকারীর একটি ইমেইল এড্রেস এবং দেশ সিলেক্ট করে একটি ফোন নম্বর দিতে হবে।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশের মোবাইল নম্বর যাচাইকরনে মোবাইল নাম্বারে ওটিপি যাবে। তাই ফোন নম্বর দেওয়ার পর ‘ওটিপি পাঠান’ বাটনে ক্লিক করুন। ৬ সংখ্যার ওটিপি কোডটি পেলে তা ওয়েবপেইজে লিখে সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন।

ধাপ ১০: জন্ম নিবন্ধনের আবেদন কপি প্রিন্ট
সর্বশেষ, ‘আবেদনটি সফলভাবে সাবমিট করা হয়েছে’ এই মর্মে স্বয়ংক্রিয় মেসেজ দেখতে পাবেন। পরবর্তীতে এই আবেদন সংক্রান্ত অনুসন্ধানের জন্য আপনার আবেদনপত্র নম্বরটি কোথাও লিখে সংরক্ষণ করুন।
নিচের ‘আবেদনপত্র প্রিন্ট করুন’ লেখাতে ক্লিক করে আপনার আবেদনটির পিডিএফ কপি ডাউনলোড এবং প্রিন্ট করে নিন।

পরবর্তীতে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্ম নিবন্ধন সংগ্রহ করতে এই আবেদন পত্র নম্বর এবং আবেদনের কপি প্রয়োজন হবে।
>নতুন জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি কাগজপত্র লাগ
জন্ম নিবন্ধন হলো একজন ব্যক্তির নাম, বয়স, পরিচয় ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের একটি নথিপত্র। তাই জন্ম নিবন্ধনের সময় দেওয়া সেই তথ্যগুলো সঠিক কি-না, তা যাচাই করার জন্য কিছু ডকুমেন্টস প্রয়োজন হয়। জন্ম সনদের জন্য আবেদনকারী ব্যক্তির বয়সভেদে প্রয়োজনে ডকুমেন্টসের ভিন্নতা দেখা দেয়। স্বাভাবিকভাবে ব্যক্তি বা শিশুর বয়স যত বেশি হয়, প্রমাণ হিসেবে কাগজপত্র তত বেশি লাগে।
২০২৩ সালে জন্ম নিবন্ধন করতে- ইপিআই টিকা কার্ড, হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের রশিদ এবং পিতা-মাতার অনলাইন জন্ম নিবন্ধন ও অন্যান্য তথ্য প্রয়োজন হয়। এছাড়াও বয়সভেদে যে সকল ভিন্ন এবং অতিরিক্ত কাগজপত্র লাগে, সেগুলোকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যথা:
নিবন্ধনকারী শিশুর বয়স ০ থেকে ৪৫ দিন হলে
- EPI কার্ড (টিকা কার্ড)/ হাসপাতালের ছাড়পত্র;
- হাল সনে পরিশোধিত হোল্ডিং ট্যাক্সের রশিদ এবং বাসার হোল্ডিং নম্বর;
- নিবন্ধনকারী শিশুর পিতা-মাতার অনলাইন জন্ম নিবন্ধনের কপি (বাধ্যতামূলক);
- নিবন্ধনকারী শিশুর পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি (যদি থাকে);
- নিবন্ধনের জন্য আবেদনকারী অভিভাবকের সচল মোবাইল নম্বর।
নিবন্ধনকারী শিশুর বয়স ৪৬ দিন থেকে ৫ বছর হলে
- EPI কার্ড (টিকা কার্ড)/ হাসপাতালের রেজিস্টার্ড স্বাস্থ্য কর্মীর সত্যায়িত প্রত্যায়নপত্র (সীলসহ);
- হোল্ডিং ট্যাক্সের রশিদ এবং বাসার হোল্ডিং নম্বর;
- নিবন্ধনকারী শিশুর পিতা-মাতার অনলাইন জন্ম নিবন্ধনের কপি (বাধ্যতামূলক);
- নিবন্ধনকারী শিশুর পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি (যদি থাকে);
- স্কুল শিক্ষার্থী হলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের প্রত্যয়নপত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে);
- আবেদনকারী অভিভাবকের সচল মোবাইল নম্বর।
আবেদনকারী ব্যক্তির বয়স ৫ বছরের বেশি হলে
- বয়স প্রমাণের জন্য রেজিস্টার্ড সরকারি এমবিবিএস বা তদূর্ধ্ব ডিগ্রিধারী ডাক্তার কর্তৃক সত্যায়িত প্রত্যয়ন পত্র (সীলসহ);
- বাংলাদেশ শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক পরিচালিত JSC/SSC/সমমান পরীক্ষার সার্টিফিকেট (যদি থাকে)
- নিবন্ধনকারী শিশুর পিতা-মাতার অনলাইন জন্ম নিবন্ধনের কপি (বাধ্যতামূলক);
- নিবন্ধনকারী শিশুর পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি (যদি থাকে);
- জন্মস্থান ও স্থায়ী ঠিকানা প্রমাণের জন্য হালনাগাদ কর পরিশোধের রশিদ/ বাড়ি বা জমি ক্রয়ের দলিল;
- আবেদনকারী ব্যক্তি বা অভিভাবকের সচল মোবাইল নম্বর।
উপরোক্ত কাগজপত্র গুলোর পাশাপাশি আবেদনকারীকে সঠিকভাবে জন্ম নিবন্ধনের একটি ফরম পূরণ করতে হবে। আপনার কাছে এসকল কাগজপত্র থাকলে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বা নিজে নিজে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। তবে বয়স বেশি হলে এবং পর্যাপ্ত ডকুমেন্টস না থাকলে, রেজিস্টার জেনারেলের কার্যালয়ে কর্মরত কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করুন।
জন্ম নিবন্ধন ফি কত টাকা
একটি শিশুর নাগরিক ও মৌলিক অধিকার হিসেবে বিবেচনা করে, ২০১০ সালের জুন মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে বিনামূল্যে জন্ম নিবন্ধন করা হতো। ২০১০-২০১১ অর্থবছর থেকে নির্দিষ্ট বয়সীমার পর থেকে নিবন্ধনের জন্য সরকারি ফি আদায় করা হয়। জন্ম নিবন্ধনের এই ফি ব্যাংক চালান বা সরাসরি জনপ্রশাসন কার্যালয়ে (ইউনিয়ন পরিষদ/সিটি কর্পোরেশন/ পৌরসভা কার্যালয়) জমা দিতে হবে।
বর্তমানে জন্ম নিবন্ধন করার ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত হারে ফি দিতে হয়:
শিশুর বয়স | বাংলাদেশ থেকে নিবন্ধনের আবেদন করলে | বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাস থেকে আবেদন করলে |
০ থেকে ৪৫ দিন | সম্পূর্ণ বিনামূল্যে | সম্পূর্ণ বিনামূল্যে |
৪৬ দিন থেকে ৫ বছর | ২৫ টাকা ফি | $1 বা ১ মার্কিন ডলার |
৫ বছরের বেশি | ৫০ টাকা ফি | $1 বা ১ মার্কিন ডলার |
জন্ম নিবন্ধন আবেদনের অবস্থা যাচাই
নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করার পর আবেদনটি এপ্রুভ হয়েছে কি-না, কিংবা জন্ম নিবন্ধন তৈরি সম্পন্ন হয়েছে কিনা, তা জানার গুরুত্ব রয়েছে।
আপনার আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা যাচাই করতে-
- bdris.gov.bd -এই লিংকে ভিজিট করে ওয়েবসাইটের মূল ওয়েবপেজে প্রবেশ করুন।
- তারপর জন্ম নিবন্ধন ট্যাবের মেন্যু থেকে- ‘জন্ম নিবন্ধন আবেদনের বর্তমান অবস্থা’ অপশনে ক্লিক করুন।
- অনুসন্ধান পেজ ওপেন হলে, আপনার আবেদনপত্রের ধরন, অ্যাপ্লিকেশন আইডি, জন্ম তারিখ পূরণ করুন।
তারপর ‘দেখুন’ বাটনে ক্লিক করলেই আপনার জন্ম নিবন্ধন আবেদনের বর্তমান অবস্থা জানতে পারবেন।
জন্ম নিবন্ধন সংগ্রহ করার স্থান
অনলাইনে নিজে নিজে জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করলে, আপনি যেই এলাকা থেকে আবেদন করেছেন সেই এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ/সিটি কর্পোরেশন/ পৌরসভা কার্যালয় থেকে ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন সংগ্রহ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনার অ্যাপ্লিকেশন আইডি, আবেদনের প্রিন্ট কপি, এবং প্রমাণপত্র হিসেবে সংযুক্ত ডকুমেন্টগুলো প্রয়োজন হবে।
ব্যক্তির জন্মস্থান/ স্থায়ী ঠিকানা/ বর্তমান ঠিকানা -এই ৩ টির যেকোন একটি ঠিকানায় জন্ম নিবন্ধন করা যাবে। আপনার বসবাসের এলাকাভেদে নিম্নোক্ত ব্যক্তিবর্গ এবং কার্যালয়ের মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধন সংগ্রহ করতে পারবেন:
- ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন পরিষদ সচিবের মাধ্যমে;
- সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বা তার দ্বারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত অন্য কোন কাউন্সিলর;
- পৌরসভার মেয়র বা তার দ্বারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত অন্য কোন কাউন্সিলর;
- ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট বা তার দ্বারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত অন্য কোন কর্মকর্তা;
- বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাস রাষ্ট্রদূত বা তার দ্বারা হস্তান্তরকৃত ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা।
এ সকল ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধন নিতে পারবেন।
জন্ম নিবন্ধন আবেদন বাতিল করার নিয়ম
অনলাইনে নিজে নিজে নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করার পর, যেকোনো কারণবশত আবেদন বাতিল করতে হতে পারে। আবেদনে গুরুত্বপূর্ণ কোন তথ্য ভুল থাকলে/ নিবন্ধনকারীর পূর্বে কোন জন্ম সনদ থাকলে কিংবা অন্য কোন কারণেও জন্ম নিবন্ধন বাতিল করা গুরুত্বপূর্ণ।
আপনি যেই এলাকায় নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছেন, সেই এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ/ পৌরসভায় গিয়ে- এপ্লিকেশন আইডি ও আবেদন বাতিলের উপযুক্ত কারণ জানাতে হবে। তারপর ইউনিয়ন পরিষদের কর্মকর্তাগণ সেই আবেদন বাতিলের ব্যবস্থা করবেন।
অন্যথায়, জন্ম নিবন্ধন অনলাইন আবেদনের পর ১৫ দিনের মধ্যে আবেদনপত্রের প্রিন্ট কপি সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা কার্যালয়ে জমা না দিলে, আবেদন বাতিল হয়ে যাবে।
শেষকথা
বাংলাদেশের প্রতিটি শিশুর জন্মগ্রহণের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাই জটিলতা এড়িয়ে খুব সহজে নিজে নিজে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করতে চাইলে উপরোক্ত ধাপগুলো অনুসরণ করতে পারেন।