ঈদ মানেই সিনেমার যুদ্ধ: দর্শক, হল মালিক আর নির্মাতার প্রত্যাশা
ঈদ আসলেই যেন সিনেমাপ্রেমীদের উৎসব দ্বিগুণ হয়ে যায়। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে ঈদ মানেই হলভর্তি দর্শক, নতুন সিনেমা, আর নির্মাতাদের মধ্যে এক ধরনের অঘোষিত যুদ্ধ। এবারের ঈদ-উল-আযহাও তার ব্যতিক্রম নয়। প্রেক্ষাগৃহে জায়গা পেতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে একাধিক সিনেমা—প্রত্যেকটি একেকটি শক্তিশালী নাম, একেকটি ভিন্ন ঘরানার গল্প।
এই প্রতিযোগিতার মূলে রয়েছে দর্শকের চাহিদা এবং হল মালিকদের ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত। নির্মাতারা চাইছেন ঈদে তাদের সিনেমা মুক্তি দিয়ে সর্বোচ্চ ব্যবসা করতে, আর দর্শকের চোখ চেয়ে আছে কার সিনেমা দিতে পারে সেরা বিনোদন। এই ধরণের সময়েই প্রকৃত ‘পাওয়ার’ বোঝা যায়—কার সিনেমায় আসলে টান আছে, কে কাকে টেক্কা দিতে পারে।
তবে প্রশ্ন হচ্ছে, সব সিনেমার জন্য কি ঈদই একমাত্র ভরসা? কিছু ছবি হয়তো ঈদের পরে মুক্তি পেলে আরও ভালো ফল করতে পারত। কারণ, ঈদের দিনে সব দর্শকের নজর একসাথে আটকে থাকে বড় বাজেট আর তারকাবহুল সিনেমাগুলোতে। ফলে অপেক্ষাকৃত ছোট বা কম প্রচারণার সিনেমাগুলো হয়তো হারিয়ে যায় সেই ভিড়ে।
তান্ডব: ঈদের রাজা হতে পারে কি?
তান্ডবের বাজেট, প্রচারণা আর তারকারা
‘তান্ডব’ নিয়ে ইতোমধ্যেই তুমুল আলোচনা। অনেকেই বলছেন, এটি হবে এবারের ঈদের ব্লকবাস্টার হিট। সিনেমাটি বড় বাজেট, অ্যাকশন-প্যাকড কনটেন্ট এবং স্টার পাওয়ারের মিশেলে নির্মিত হয়েছে। পরিচালক, প্রযোজক থেকে শুরু করে অভিনেতা—সবাই দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে কাজ করেছেন যেন ‘তান্ডব’ ঈদের দিন থেকে হল দখল করে রাখতে পারে।
সিনেমাটির প্রচারণা শুরু হয়েছে মাসখানেক আগেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেলার, বিহাইন্ড দ্য সিন, গানের ভিডিও সব কিছুই ভাইরাল হচ্ছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, নির্মাতারা প্রচারণা নিয়ে বেশ সচেতন এবং পেশাদার। এই ধরণের প্রস্তুতি ‘তান্ডব’-কে ঈদে প্রেক্ষাগৃহে ১০০+ হলে জায়গা পাওয়ার সম্ভাবনা করে তুলেছে বাস্তব।
তান্ডবের সাথে প্রতিযোগিতা কারা?
তবে এখানে একটা বড় প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এই ১০০+ হলে মুক্তি পেলে অন্য সিনেমাগুলোর জন্য কতটুকু জায়গা থাকবে? ঈদের দিনে এক প্রেক্ষাগৃহে ২-৩টি সিনেমা চালানো বাস্তবিকই কঠিন। যেহেতু তান্ডব ইতোমধ্যে ডিস্ট্রিবিউটরদের সাথে কাজ করে হল নিশ্চিত করছে, তাই বাকি সিনেমাগুলোর ভাগ্যে কিঞ্চিৎ অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে।
নীলচক্র: থ্রিলার ঘরানায় ভিন্ন স্বাদের চমক
নীলচক্রের কাহিনী ও নির্মাণ শৈলী
ঈদের ভিড়ে ‘নীলচক্র’ একদমই ব্যতিক্রম। এটি একটি থ্রিলার ঘরানার ছবি যেটি রহস্য, ক্রাইম, আর নাটকীয়তায় ভরপুর। এর মূল উপজীব্য একধরনের কনসপিরেসি বা ষড়যন্ত্র যা দর্শককে এক মুহূর্তের জন্যও চোখ সরাতে দেবে না। নির্মাতারা চেষ্টা করেছেন গল্পের মোচড় এবং ক্লাইম্যাক্সে এমন চমক রাখতে যা সাধারণ দর্শকদেরও ভাবিয়ে তুলবে।
সিনেমার ট্রেলার থেকেই বোঝা যাচ্ছে, ক্যামেরার কাজ, লাইটিং, এবং ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর সব কিছুই যথেষ্ট উন্নত। তবে প্রশ্ন হলো, এই ধরণের থ্রিলার সিনেমা কি ঈদের মূলধারার দর্শকের কাছে পৌঁছাতে পারবে? অনেকেই ঈদে চায় হাসির, রোমান্স বা অ্যাকশনের মিশেল। সেক্ষেত্রে ‘নীলচক্র’ একটু ভিন্ন ঘরানার হলেও তার একটা নির্দিষ্ট দর্শকশ্রেণী থাকবে নিশ্চিত।
ইনসাফ: সামাজিক বার্তায় ভরপুর বাস্তবধর্মী গল্প
ইনসাফের প্রেক্ষাপট ও প্রাসঙ্গিকতা
বাংলাদেশের চলমান বাস্তবতা, দুর্নীতি, বিচারহীনতা ও মানুষের অধিকার নিয়ে যদি কোনো সিনেমা হয়, তাহলে তা হতে পারে ‘ইনসাফ’। এটি একটি সামাজিক ও রাজনৈতিক বার্তা সমৃদ্ধ সিনেমা যেখানে ন্যায়বিচারের সংগ্রাম, একাকী যোদ্ধার সাহসিকতা আর এক সমাজ ব্যবস্থার মুখোশ উন্মোচনের চেষ্টা করা হয়েছে।
এই ধরণের সিনেমা সাধারণত উৎসবের দিনে জনপ্রিয় না হলেও, ঈদের পরে ধীরে ধীরে ‘ওয়ার্ড অফ মাউথ’-এর মাধ্যমে সাফল্য পায়। ‘ইনসাফ’ সেই সম্ভাবনারই প্রতিনিধিত্ব করছে। নির্মাতারা যদি একে ঈদের পরে মুক্তি দিতেন, তাহলে হয়তো ভালো ফলাফল আশা করা যেত। কারণ এর গল্প সময়োপযোগী হলেও ঈদের দিন দর্শক একটু হালকা ধাঁচের বিনোদন খোঁজে।
এশা মার্ডার: কর্মফল – নারী কেন্দ্রিক অপরাধ-রহস্য
নারী চরিত্রের জোরালো উপস্থিতি ও গল্পের টুইস্ট
ঈদে রিলিজ পেতে যাচ্ছে আরেকটি ব্যতিক্রমধর্মী সিনেমা—‘এশা মার্ডার: কর্মফল’। নাম শুনলেই বোঝা যাচ্ছে, এটি একটি মার্ডার মিস্ট্রি এবং এর কেন্দ্রে রয়েছে একটি নারী চরিত্র। সিনেমার গল্পে আছে খুন, তদন্ত, রহস্য, এবং একটি বড় টুইস্ট যা শেষ পর্যন্ত দর্শকদের চমকে দেবে।
বাংলাদেশে নারী চরিত্র কেন্দ্রিক সিনেমার সংখ্যা কম। আর এই ধরণের থ্রিলার সিনেমা হলে তুলনামূলক কম যায়। তবে দর্শকদের মধ্যে পরিবর্তন আসছে, এবং এখনকার প্রজন্ম আগ্রহী নতুন ধরণের গল্পে। তাই ‘এশা মার্ডার: কর্মফল’ যদি ঠিকমতো প্রচার পায়, তাহলে তা সফল হতে পারে।
টগর: প্রেম, প্যাশন এবং পুরনো ঢঙের গল্পের সমন্বয়
টগরের রেট্রো ফ্লেভার কি আধুনিক দর্শক টানবে?
ঈদে মুক্তি পেতে যাওয়া ‘টগর’ সিনেমাটি একধরনের পুরনো ঢঙের প্রেমকাহিনি, যেখানে রয়েছে কষ্ট, আত্মত্যাগ এবং ক্লাসিক রোমান্সের ছোঁয়া। এই সিনেমাটি অনেকটাই ৯০ এর দশকের রোমান্টিক স্টাইলকে অনুসরণ করে তৈরি, যেখানে নায়ক-নায়িকার প্রেম নানা বাঁধার মধ্য দিয়ে এগোয়, শেষে হয় একটি নাটকীয় মোড়।
এই ধরণের গল্প আগে দর্শক বেশ পছন্দ করত। তবে এখনকার দর্শক অনেক বেশি ফাস্ট-পেসড এবং এক্সপেরিমেন্টাল গল্পে আগ্রহী। তাই ‘টগর’ সফল হবে কিনা, তা নির্ভর করছে গল্প বলার কৌশল, সংলাপ এবং আবেগকে কতটা আধুনিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তার উপর। যদি নির্মাতা গল্পটিকে রেট্রো লুকে রেখে আধুনিক প্রেজেন্টেশন দিতে পারেন, তাহলে সেটা দর্শকের মধ্যে নস্টালজিয়া জাগাতে পারে।
গান ও আবেগের মিশেল
টগরের সবচেয়ে বড় সম্পদ হতে পারে এর সাউন্ডট্র্যাক। সিনেমার গানে যদি আবেগের ছোঁয়া থাকে এবং সেই গান যদি দর্শকের মুখে মুখে ফিরতে শুরু করে, তাহলে ঈদে ‘টগর’ নিজের একটি আলাদা জায়গা করে নিতে পারবে। এ ছাড়া ছবির আবহ সংগীত এবং সিনেমাটোগ্রাফি যদি হৃদয় ছুঁয়ে যায়, তাহলে গল্পের সাধারণত্ব দর্শকের চোখে ধরা পড়বে না।
পিনিক: সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারে নতুন সংযোজন
বিপরীতমুখী দর্শকপ্রবণতায় দাঁড়িয়ে পিনিক
‘পিনিক’ হচ্ছে এমন একটি সিনেমা যেটি মূলধারার গল্পের বাইরে। এটি একটি সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার, যেখানে প্রধান চরিত্রের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব, আত্মপরিচয়ের সংগ্রাম এবং ভেতরের অন্ধকারকে তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশে এই ধরণের থিমে খুব কম সিনেমা হয়েছে, এবং এটি হতে পারে একটি সাহসী পদক্ষেপ।
তবে ঈদের মতো বাণিজ্যিক সময়ে এই ধরণের সিনেমা কতটা দর্শক টানতে পারবে তা নিয়েই রয়েছে প্রশ্ন। দর্শকরা যখন সিনেমা হলে যায় মজা ও বিনোদনের জন্য, তখন ‘পিনিক’-এর মতো মনস্তাত্ত্বিক গল্প তাদের ভাবিয়ে তুলবে, সেই ভাবনার জন্য তারা প্রস্তুত কিনা তা সময়ই বলে দেবে।
পিনিকের পোস্টার ও ট্রেলারের গ্রহণযোগ্যতা
সিনেমার পোস্টার এবং ট্রেলার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এটি নিঃসন্দেহে ভিন্নধর্মী। চরিত্রের গভীরতা, ডার্ক ভিজ্যুয়াল এলিমেন্টস এবং টানটান উত্তেজনা দেখা যায় ট্রেলারে। নির্মাতা যদি প্রচারণায় একটু জোর দেন এবং দর্শকের কাছে স্পষ্ট করেন সিনেমার ভিন্নতা, তাহলে ঈদেই নয়, ঈদের পরেও ‘পিনিক’ নিজস্ব দর্শক তৈরি করতে পারবে।
ফোর্স: অ্যাকশন, ড্রামা ও কমার্শিয়াল ফ্লেভারের চমৎকার ফিউশন
ফোর্সের অ্যাকশন সিন ও তারকাবহুল কাস্টিং
‘ফোর্স’ নামেই বোঝা যাচ্ছে এটি একটি অ্যাকশনভিত্তিক সিনেমা, যেখানে থাকবে মারদাঙ্গা দৃশ্য, চেজ সিকোয়েন্স, এবং উত্তেজনায় ঠাসা স্ক্রিপ্ট। মূলত যারা হিরোইজম, থ্রিল আর মিশনে ভরপুর সিনেমা পছন্দ করে, তাদের জন্য ‘ফোর্স’ হতে পারে পারফেক্ট চয়েস।
এই সিনেমাটিতে রয়েছে বেশ কিছু পরিচিত মুখ, যার মধ্যে অন্যতম একজন সুপারস্টারও রয়েছেন। তার উপস্থিতি একাই দর্শক টানতে সক্ষম। নির্মাতা ট্রেলার, টিজার এবং গান দিয়েই ইতোমধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করতে পেরেছেন। ট্রেলার দেখে বোঝা যাচ্ছে, অ্যাকশন সিনগুলোতে কাজ করা হয়েছে আন্তরিকভাবে, এবং VFX-ও তুলনামূলক উন্নত।
বাণিজ্যিক সিনেমার মূল উপাদানসমূহ
ফোর্স সিনেমাটির সফলতার পেছনে থাকবে এর গতি, আবেগ, অ্যাকশন এবং সংলাপের টাইমিং। ঈদে পরিবারের সবাই মিলে সিনেমা দেখতে যায়, আর এই ধরণের মিশ্রধর্মী কমার্শিয়াল সিনেমাই সবার পছন্দ। তাই ‘ফোর্স’ ঈদের অন্যতম সেরা পারফর্মার হতে পারে যদি হলে জায়গা পায় পর্যাপ্ত।
একসাথে এত সিনেমা রিলিজ: লাভ না ক্ষতি?
প্রেক্ষাগৃহ সংকট ও হল মালিকদের দুশ্চিন্তা
এই ঈদে একসাথে সাতটি সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে, যা বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহ সংখ্যার তুলনায় অনেক বেশি। বাস্তবতা হলো, দেশের মোট হলসংখ্যা ১০০-১৫০-এর মধ্যে সীমাবদ্ধ। একসাথে এত সিনেমা মুক্তি পেলে প্রত্যেকটি সিনেমাকে পর্যাপ্ত স্ক্রিন দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এর ফলে হয় সিনেমার চলার সময় কমে যায়, নয়তো দর্শককে অপশন বেশি হওয়ায় বিভ্রান্ত হতে হয়।
হল মালিকরা সাধারণত সেই সিনেমাকে প্রাধান্য দেন যেটি সবচেয়ে বেশি দর্শক টানবে এবং ব্যবসা দেবে। ফলাফলস্বরূপ কিছু সিনেমা স্ক্রিন পায়, কিছু একদমই পায় না। এটি নির্মাতাদের জন্য হতাশাজনক হলেও বাস্তবতা। তাই অনেকেই বলছেন, ঈদের পরে কিছু সিনেমা মুক্তি দিলে সেগুলো ভালো চলত এবং বিনিয়োগও ফিরত।
ঈদের পরেও যে সিনেমাগুলো চলতে পারতো আরও ভালো
বিকল্প মুক্তির সময় বেছে নিলে সুবিধা কী হতো?
সব সিনেমার জন্য ঈদই কি আদর্শ মুক্তির সময়? প্রশ্নটা উঠছে কারণ একসাথে এতগুলো সিনেমা মুক্তি পেলে কিছু সিনেমা ন্যায্য স্ক্রিনটাই পায় না। ‘ইনসাফ’, ‘পিনিক’, ‘এশা মার্ডার: কর্মফল’ এই ধরনের ভিন্নধর্মী সিনেমা যদি ঈদের পরে মুক্তি পেত, তাহলে তারা হয়তো বেশি সময় পেত দর্শকদের কাছে পৌঁছানোর জন্য।
ঈদের পর সাধারণত হলে সিনেমার চাপ কম থাকে। তখন দর্শক যদি দেখে যে একটি নতুন সিনেমা এসেছে যার গল্প বা কনটেন্ট ভিন্নধর্মী, তখন তারা সময় নিয়ে দেখে। এতে করে সিনেমার আয় দীর্ঘমেয়াদে বেড়ে যায়, এবং সিনেমাটি নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়। এক কথায়, সময় নিয়ে আগাতে পারার সুযোগ পায় সেই ছবি।
ডিস্ট্রিবিউশন ও হল বুকিংয়ের রাজনীতি
কে কত হল পাবে – পিছনের কাহিনি
বাংলাদেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে ডিস্ট্রিবিউশন ও হল বুকিং এখন একপ্রকার কৌশলগত যুদ্ধ। বড় প্রযোজনা সংস্থাগুলো বা বড় তারকারা সহজেই বড় পরিসরে হলে ঢোকার সুযোগ পান। কারণ, হলে সিনেমা রাখার জন্য যে পরিমাণ প্রচার, বুকিং, এবং মিউচুয়াল সাপোর্ট দরকার, তা সব নির্মাতার কাছে নেই।
এই অবস্থায় ছোট বা নতুন নির্মাতারা হল পাওয়া থেকেই বঞ্চিত হন। দর্শক আগ্রহী হলেও সিনেমার শো টাইম পাওয়া যায় না। তাই শুধু সিনেমার কনটেন্ট ভালো হলেই চলে না, সেটা দর্শকের সামনে পৌঁছে দিতে চাই হল পাওয়ার ক্ষমতা, এবং সেটাই এই ঈদের বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
মার্কেটিং ও সোশ্যাল মিডিয়া ট্রেন্ডিংয়ের গুরুত্ব
কোন সিনেমা কতটা ট্রেন্ড করছে?
বর্তমানে সিনেমার সাফল্যের বড় অংশ নির্ভর করে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর উপর। যেই সিনেমা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতে পারে, সেই সিনেমার দর্শক বাড়ে। এবারের ঈদের লাইনআপে দেখা যাচ্ছে ‘তান্ডব’ এবং ‘ফোর্স’ ট্রেলারের দিক থেকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে।
অন্যদিকে ‘নীলচক্র’ এবং ‘পিনিক’ কনটেন্ট-ভিত্তিক হলেও সেভাবে ভাইরাল হতে পারেনি, যা দুঃখজনক। নির্মাতাদের এখন বুঝতে হবে, শুধু ট্রেইলারে বাজি মারলেই চলবে না, চাই স্ট্র্যাটেজিক ক্যাম্পেইন। প্রচারণায় ইনফ্লুয়েন্সার, রিভিউয়ার, সিনেমাটিক রিলস, হ্যাশট্যাগ ক্যাম্পেইন—সব মিলিয়েই তৈরি হয় একটি সাকসেসফুল মার্কেটিং প্ল্যান।
দর্শকের চাহিদা বনাম নির্মাতার সিদ্ধান্ত
কী চায় দর্শক, কী দেয় নির্মাতা?
বাংলাদেশি দর্শক এখন অনেক বেশি সচেতন। তারা শুধু তারকার মুখ বা বড় বাজেট নয়, খোঁজে গল্প, প্রেজেন্টেশন, সিনেমাটোগ্রাফি, অভিনয়—সব কিছুতেই পরিপূর্ণতা। কিন্তু অনেক সময় নির্মাতারা স্রেফ ঈদ বলেই সিনেমা রিলিজ করে দেন, সেটি গল্পের গুণগত মান নিশ্চিত না করেই।
ফলাফল? দর্শক হলে গিয়ে হতাশ হয়, এবং এক সিনেমা দেখে খারাপ অভিজ্ঞতা হলে বাকি সিনেমাগুলো দেখার আগ্রহ হারায়। তাই নির্মাতাদের উচিত দর্শকের রুচি বুঝে গল্প সাজানো এবং সঠিক সময়ে মুক্তি দেওয়া। একসাথে না দিয়ে প্ল্যানিং করে দিলে অনেক বেশি সফলতা আসতে পারতো।
ভবিষ্যতের জন্য কিছু পরামর্শ ও নির্দেশনা
শিল্প রক্ষা করতে চাই টিমওয়ার্ক ও স্ট্র্যাটেজি
বাংলাদেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র, কিন্তু বারবার একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করে আমরা নিজেদেরই ক্ষতি করছি। একসাথে এতগুলো সিনেমা ঈদে রিলিজ দিয়ে সবাই লস খেলে, পরবর্তী বছর কেউ সাহস পাবে না ইনভেস্ট করতে।
অতএব, নির্মাতা, প্রযোজক, হল মালিক ও ডিস্ট্রিবিউটর সবাইকে বসে পরিকল্পনা করতে হবে। কোন সিনেমা কবে রিলিজ পাবে, সেটা পূর্ব নির্ধারিত হলে সুবিধা হবে সবার। ঈদে ২-৩টি বড় সিনেমা, আর বাকি সিনেমাগুলো পর্যায়ক্রমে মুক্তি—এই পলিসি হলে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিও রক্ষা পাবে, দর্শকরাও ভালো কনটেন্ট পাবে।
উপসংহার: ঈদে কার কেমন শক্তি, বোঝা যাবে এবারই
এই ঈদ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশি সিনেমা জগতের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট। একদিকে রয়েছে ‘তান্ডব’-এর মত ব্লকবাস্টার প্রত্যাশিত ছবি, অন্যদিকে ‘ইনসাফ’ ও ‘নীলচক্র’-এর মত কনটেন্ট-চালিত সিনেমা। কে কাকে টপকে যাবে, কে রয়ে যাবে হারিয়ে—সবই নির্ভর করছে দর্শকের উপর।
যারা সময় মতো প্রচারণা করেছে, যারা গল্পে ও প্রেজেন্টেশনে ইউনিক, তারা টিকে থাকবে। আর যারা শুধু তারকার নামেই হল দখল করতে চায়, তাদের জন্য সময় সুখকর নাও হতে পারে। এই ঈদেই স্পষ্ট হয়ে যাবে, কোন নির্মাতা কতটা শক্তিশালী, আর কার সিনেমা দর্শকপ্রিয়তার আসনে স্থান পাবে।
FAQs (সচরাচর জিজ্ঞাসা)
১. তান্ডব কি সবচেয়ে বেশি হলে মুক্তি পাবে?
হ্যাঁ, বর্তমানে সব হিসাব অনুযায়ী ‘তান্ডব’ ১০০+ হলে মুক্তি পেতে যাচ্ছে, যা এই ঈদের মধ্যে সর্বোচ্চ।
২. ইনসাফ কি ঈদের সময় সঠিক?
‘ইনসাফ’-এর মত সামাজিক সিনেমা ঈদের পরে রিলিজ হলে দর্শকের কাছ থেকে বেশি সাড়া পাওয়া যেত।
৩. থ্রিলার সিনেমা ঈদে কেমন চলে?
থ্রিলার সিনেমা ঈদে তুলনামূলক কম চলে, তবে ভালো প্রচারণা এবং চমক থাকলে দর্শক পছন্দ করে।
৪. সব সিনেমা একসাথে রিলিজ দেওয়া কি লাভজনক?
না, এতে স্ক্রিন বিভাজন হয় এবং অধিকাংশ সিনেমা ক্ষতির সম্মুখীন হয়। পরিকল্পিত রিলিজে সবার লাভ হয়।
৫. দর্শক এখন কেমন সিনেমা চায়?
দর্শক এখন ইউনিক গল্প, ভালো অভিনয় এবং প্রেজেন্টেশনের সিনেমা পছন্দ করে, শুধুমাত্র তারকাবহুল নয়।