ওজন না বাড়িয়ে খাওয়ার খাবার, হেলদি ফুড, লো ক্যালোরি খাবার, শাকসবজি তালিকা, bengali weight loss diet
মোটা না হয়ে খাওয়া যায় এমন সবজি ও ফল - ফুল তালিকা
কেন কিছু খাবার মোটা না করেই পেট ভরায়?
আমরা প্রায়শই শুনি "কম খাও, না হলে মোটা হয়ে যাবে।" কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, সব খাবার সমান নয়। কিছু খাবার আছে যেগুলো প্রচুর খেলেও শরীরে অতিরিক্ত ফ্যাট জমে না। কারণ এদের ক্যালোরি ঘনত্ব কম, মানে অনেক খাওয়া যায় কিন্তু ক্যালোরি আসে কম। এই ধরনের খাবারে প্রচুর ফাইবার, পানি, এবং কম ফ্যাট থাকে। ফলাফল? আপনি অনেকক্ষণ ধরে তৃপ্ত থাকবেন, খিদে কম অনুভব করবেন এবং শরীরেও বাড়তি ওজন আসবে না। চলুন জেনে নিই এমন ১২টি খাবার সম্পর্কে যেগুলো নিশ্চিন্তে খেতে পারেন।
যে সবজি ও ফল প্রচুর খেলেও মোটা করবেন না
১. লাউ
লাউ পানি ও ফাইবার সমৃদ্ধ একটি দারুণ হালকা সবজি। এটি শরীর ডিটক্স করতে সহায়তা করে এবং হজম ভালো রাখে। গ্রীষ্মকালে শরীর ঠাণ্ডা রাখতে লাউ খাওয়া অনেক উপকারী। কার্বোহাইড্রেট ও ক্যালোরি কম থাকায় এটি ওজন কমাতে সহায়তা করে। এক কাপ লাউ রান্না করে খেলেও মাত্র ২০-২৫ ক্যালোরি থাকে, তাই ডায়েট মেন্যুতে এটি থাকা চাই-ই চাই।
২. শসা
৯৬% পানি থাকা শসা হাইড্রেশনে দুর্দান্ত এবং ক্যালোরি প্রায় নেই বললেই চলে। ডায়েটিং-এর সময় স্ন্যাকস হিসেবে শসা খাওয়া খুবই উপকারী। এটি শরীর ঠাণ্ডা রাখে, টক্সিন দূর করে এবং ত্বক উজ্জ্বল রাখে। এছাড়া একে সালাদের সাথেও খাওয়া যায়, যা দীর্ঘ সময় পেট ভরিয়ে রাখে।
৩. মুলা
মুলা ফাইবার এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানে ভরপুর। এটি হজমে সাহায্য করে এবং পেট পরিষ্কার রাখতে কাজ করে। যারা গ্যাস্ট্রিক বা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন, তাদের জন্য এটি দারুণ উপকারী। রান্না করেও খাওয়া যায় আবার কাঁচা সালাদ হিসেবেও খাওয়া যায়।
৪. টমেটো
টমেটোতে রয়েছে লাইকোপেন, যা একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি শুধু ওজন কমায় না, বরং হৃদরোগ এবং ক্যান্সার প্রতিরোধেও কার্যকর। টমেটো ক্যালোরি কম এবং পানি ও ফাইবার বেশি, তাই এটি নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখা যেতে পারে।
৫. শালগুম
শালগুম একটি মাটির নিচে জন্মানো সবজি যেটি ভিটামিন সি, পটাশিয়াম এবং ফাইবারে সমৃদ্ধ। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং ওজন কমানোর জন্য দারুণ। রান্না বা ভাপে সিদ্ধ করে খেলে শরীর পায় প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্টস, কিন্তু মেদ জমে না।
৬. পালং শাক
পালং শাকে রয়েছে আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, ফাইবার এবং নানা ভিটামিন। এটি হজম ভালো রাখে, পেট ভরায় এবং ক্ষুধা কমায়। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পালং শাক খাওয়া খুবই উপকারী কারণ এটি ইনসুলিন সিস্টেম ঠিক রাখে। সালাদ, সবজি, বা স্যুপে পালং শাক রাখলে ওজন নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়।
৭. বাঁধাকপি
বাঁধাকপি কম ক্যালোরি এবং ডিটক্সিফাইং গুণসম্পন্ন। এটি শরীরের টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে, ফলে হজম শক্তি বাড়ে এবং ওজনও কমে। এক কাপ বাঁধাকপি রান্না করে খেলেও ক্যালোরি ২৫ এর নিচে থাকে। এটি বিভিন্ন রেসিপিতে ব্যবহারযোগ্য – যেমন ভাজি, স্যুপ বা সালাদ।
৮. ফুলকপি
ফুলকপি লো কার্ব, লো ক্যাল ও ফাইবার রিচ – অর্থাৎ ওজন কমানোর সব উপাদানই এতে রয়েছে। এটি হজমে সহায়ক, পাকস্থলীতে ফ্যাট জমা রোধ করে এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে। বিশেষত যারা কিটো ডায়েট করেন, তাদের জন্য ফুলকপি একটি অনবদ্য বিকল্প।
৯. সাদা মাশরুম
মাশরুমে রয়েছে প্রোটিন, ভিটামিন ডি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এটি দেহে ফ্যাট জমতে দেয় না এবং ইনফ্লেমেশনও কমায়। এক কাপ মাশরুমে মাত্র ১৫-২০ ক্যালোরি থাকে, তাই যেকোনো স্যুপ বা সালাদে এটি নির্দ্বিধায় রাখা যায়।
১০. জাম্বুরা
জাম্বুরা মেটাবলিজম বাড়ায় ও ফ্যাট বার্ন করে। এটি খাওয়ার পর শরীরে ক্যালোরি বার্নের হার বেড়ে যায়, যেটা ওজন কমাতে সহায়ক। সকালের নাস্তায় একটি জাম্বুরা খেলে সারা দিন ফ্রেশ ও লাইট অনুভব করবেন।
১১. তরমুজ
তরমুজ পানি সমৃদ্ধ একটি ফল যা হাইড্রেশন এবং ওজন কমানো দুটোতেই উপকারী। এক কাপ তরমুজে ক্যালোরি থাকে মাত্র ৩০-৪০। তাই গরমকালে স্ন্যাকস হিসেবে এটি খাওয়া যেতে পারে।
১২. গাজর
গাজরে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন, ফাইবার এবং ভিটামিন এ। এটি চোখের জন্য যেমন ভালো, তেমনই শরীর সুস্থ রাখে। লো ক্যালোরি হওয়ায় এটি সেদ্ধ বা কাঁচা যেভাবেই খান, মোটা হবেন না।
উপসংহার
ওজন না বাড়িয়ে পেট ভরানোর জন্য উপরের খাবারগুলোই আপনার সেরা পছন্দ হতে পারে। স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার জন্য এসব কম ক্যালোরি অথচ পুষ্টিকর খাবারকে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন। খেতে ভয় নয়, বরং বেছে খেয়ে বাঁচুন সুন্দরভাবে।